মৌলভী বাজার নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় লোকমানসহ (৪৫) নিহত সাতজন একই পরিবারের সদস্য। তারা দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। নিহতদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনসহ অন্যন্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়া পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করতে চায় পুলিশ।
তবে স্বজনারা নিহতদের মরদেহ নেবেনা বলে পুলিশকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
নিহতরা হলো- লোকমান আলী (৪৫) ও তার স্ত্রী শিরিনা আক্তার (৩৫), সন্তান আমেনা খাতুন (১২), সুমাইয়া আক্তার (৯), ফাতেমা (৫), মরিয়ম (৩) ও খাদিজা (৬ মাস)।
২০০২ সালে ঘোড়াঘাট উপজেলার কলাবাড়ী গ্রামের আবু বকর সিদ্দিকের মেয়ে শিরিনা আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে লোকমান আলীর।
শিরিনা আক্তারের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, গত কয়েক বছর আগেই জানতাম লোকমান জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তাকে একাধিক বার বলার পরও সে মানেনি। এক পর্যায়ে মেয়ে ও নাতনীদের তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে লোকমান জঙ্গি কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবে ও ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করবে বলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যায়। তারপর থেকে আর দেখতে পেলাম না মেয়ে ও নাতনীদের। এরপর থেকে গত ৫ বছর তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে ঘটনার আগের দিন একটি অচেনা নম্বর থেকে মেয়ে ও নাতনীরা ফোন দিয়ে কথা বলে। মেয়ে শিরিনা কান্নার সুরে বার বার বলেছে ক্ষমা করে দিয়েন। তাকে ফিরে আসার কথা বললে, সে বলে আর সম্ভবনা। পরদিন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নিহতদের বিবরণ দেখে ও ঘটনার আগের দিন মোবাইল ফোনে কথা বলার মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হই। তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য মরদেহ নেবোনা বলে পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছি।
উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে লোকমান আলীসহ স্ত্রী-সন্তানদের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বাবা নুরুল ইসলাম। লোকমান আলীরা ৩ ভাই। এক ভাই প্রতিবন্ধী, এক ভাই গার্মেন্টসে কাজ করেন ও অপর ভাই স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কাজ করেন। তাদের উভয় পরিবারই মরদেহ নেবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে পুলিশকে।
ঘোড়াঘাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসরাইল হোসেন জানান, আমাদের কাছে আগে থেকেই লোকমানের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ের তথ্য ছিল। লোকমানের বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানায় মামলা রয়েছে। তাকে আটকে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। জঙ্গি লোকমানের বাবা ও শ্বশুর বাড়ির সদস্যরা মরদেহ নেবেন না বলে জানিয়েছেন।
গত ৩০ মার্চ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাসিরপুর গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন হিট ব্যাক’ অভিযান শেষে ওই আস্তানা থেকে চার শিশুসহ সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।