রাশিয়া বিশ্বকাপ যেন ফেবারিটদের পতনের বিশ্বকাপ। অঘটনের বিশ্বকাপ। জার্মানি বিদায় নিল গ্রুপপর্ব থেকেই। এরপর শেষ ষোলোর শুরুর দিনে বিদায় নিল আর্জেন্টিনা ও পর্তুগাল। পরদিন বিদায় নেয় স্পেন। এবার কী তাহলে ব্রাজিলের পালা? অনেকেই শঙ্কা করছিল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে।
কারণ প্রতিপক্ষ চীনের প্রাচীর হয়ে ওঠার সামর্থ নিয়ে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গুইলার্মো ওচোয়াদের মেক্সিকো। যারা জায়ান্ট জার্মানিকে হারিয়েছে গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচেই। সেই হার জার্মানির বিদায় নেওয়ার পথটাকে অনেকটা পিচ্ছিল করেছিল। তাহলে কী এবার ব্রাজিলের পালা? এমন শঙ্কা মনে নিয়ে দুরুদুরু বুকে ব্রাজিলের খেলা দেখতে বসল কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীরা। প্রথম ২৫ মিনিটে ব্রাজিলের সমর্থকদের বুকের ধুকফুকানি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল মেক্সিকো।
ব্রাজিলের উপর চাপ দিয়ে তারা খেলতে থাকে। একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে। বলের দখলে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্রাজিলকে রীতিমতো ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। পাশাপাশি টার্গেট করে নেইমারকে করতে থাকে আঘাত। নেইমার বার বার লুটিয়ে পড়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। কখনো নিজের পায়ের কারিকুরি, কখনো অদম্য গতি দিয়ে মেক্সিকোর রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছেন।
২৫ মিনিট পর থেকে আস্তে আস্তে ম্যাচে ফেরে ব্রাজিল। অবশ্য প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেও জালের নাগায় পায়নি তারা। তাদের জালের নাগাল পেতে দেয়নি মেক্সিকোর গোলরক্ষক ওচোয়া। তাতে গোলশূন্য ড্র নিয়ে বিরতিতে যায় তিতে শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে নেইমার বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনায় গোল করে এগিয়ে নেন ব্রাজিলকে। এরপর আর পাত্তা পায়নি মেক্সিকানরা। তাদের উপর বাকি সময় চড়াও হয়ে খেলে সেলেকাওরা। শেষ দিকে ফিরমিনহো নেমে আরো একটি গোল করেন। তার এই গোলেও সহায়তা ছিল নেইমারের। সব মিলিয়ে এক নেইমারের পিঠে চড়ে অঘটনের বিশ্বকাপের আরো একটি বৈতরণি পার হল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।
ম্যাচের ৫১ মিনিটে ডি বক্সের সামনে বল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে উইলিয়ানকে ব্যাক পাস দেন নেইমার। ব্যাক পাস দিয়েই দৌড়ে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েন তিনি। সেখানে ক্রসে বল বাড়িয়ে দেন উইলিয়ান। আলতো টোকায় ডানপ্রান্ত দিয়ে বল জালে জড়ান নেইমার। এটা ছিল বিশ্বকাপে নেইমারের ষষ্ঠ গোল। আর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ২২৭তম গোল। এই গোলের ফলে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলদাতা দল হল ব্রাজিল। এ যাত্রায় তারা পেছনে ফেলে জার্মানিকে।
ম্যাচের ৮৮ মিনিটে ব্যবধান বাড়ান ফিলিপে কুতিনহোর বদলি হিসেবে নামা রবার্তো ফিরমিনহো। এ সময় নেইমার মাঝমাঠের একটু সামনে বল পেয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে যান মেক্সিকোর ডি বক্সের দিকে। ওচো কিছুটা সামনে এগিয়ে আসেন। তাকে আসতে দেখে কোনাকুনি শট নেন নেইমার। ওচোয়া বলের নাগাল না পেলেও পা দিয়ে বলের গতিপথ পরিবর্তন করে দেন। সেই সময়ের মধ্যে ফিরমিনো দৌড়ে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে চলে আসেন। ডান পা দিয়ে আস্তে করে বল ঠেলে দেন জালের মধ্যে। বলের সঙ্গে তিনি নিজেও চলে যান জালের ভেতরে। ওচোয়ার চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। ব্যবধানটা অবশ্য আরো বাড়তে পারত। কিন্তু সেটা সম্ভব হতে দেয়নি মেক্সিকোর গোলরক্ষক ওচোয়া। পুরো ম্যাচে একমাত্র তিনিই ব্রাজিলকে বেশ ভূগিয়েছেন।
নেইমারের পরে যদি কেউ ম্যাচসেরা হওয়ার দাবিদার থাকে, তাহলে সেটা মেক্সিকোর ওচোয়া।