কাজান যেন অভিশপ্ত এক মাঠ। এই মাঠেই ৯৬ ঘণ্টা আগে ২০১৪ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি ২-০ গোলে কোরিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল। চারদিনের ব্যবধানে সেই একই মাঠে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল আর্জেন্টিনা। স্টেডিয়াম একটি। কিন্তু বাড়ি ফেরার পথ তৈরি করে দিল দুটো দলের। ২০১৪ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স-আপ দল বিদায় নিল একই মাঠের সবুজ ঘাস মাড়িয়ে।
আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ ও মিডফিল্ড আর একটু চৌকস হলে হয়তো ভিন্ন ফলও আসতে পারত এই ম্যাচে। কিন্তু তাদের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের দৃষ্টিকটু রক্ষণবুহ্য ফ্রান্সের আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড়দের খুব বেশি প্রতিরোধ করতে পারেনি। চেষ্টা করেছেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, লিওনেল মেসি, কুন আগুয়েরো। কিন্তু ফ্রান্সের তারকা সমৃদ্ধ রক্ষণভাগ, মিডফিল্ড ও আক্রমণভাগের সঙ্গে পেরে ওঠেনি তারা। মূলত গতির কাছেই হার মেনেছে আর্জেন্টিনা।ফলে দিনশেষে পরাজিত দলের খাতায় নাম উঠল লিওনেল মেসির মতো ভিনগ্রহের ফুটবলারের। বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যেতে হল শেষ ষোলোর বারান্দা থেকেই।
ম্যাচের প্রথমার্ধে ফ্রান্স প্রভাব বিস্তার করে খেললেও স্কোর লাইনে সমতা ছিল। ম্যাচের ১৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে অ্যান্তোনিও গ্রিজমান গোল করে এগিয়ে নেন ফ্রান্সকে। ম্যাচের ৪১ মিনিটে ডি বক্সের সামনে এভার বানেগার বাড়িয়ে দেওয়া বল পেয়েই শট নেন ডি মারিয়া। তাতে দৃষ্টিনন্দন এক গোল পেয়ে যান তিনি। আর আর্জেন্টিনা পায় পায়ের নিচে লড়াই করার মাটি। তার গোলে শক্তি সঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা শিবিরে। আমরা পারব মনোভাব জেগে ওঠে তাদের মধ্যে।
বিরতি থেকে ফিরে এসেই মার্কাদো এগিয়ে নেন আর্জেন্টিনাকে। লুকাস হার্নান্দেজের ক্রস থেকে বল পেয়ে জালে জড়াতে ভুল করেননি তিনি। তবে বেশিক্ষণ এগিয়ে থাকতে পারেনি তারা। ৫৭ মিনিটে ডি মারিয়ার মতো দূর থেকে শট নিয়ে জালে পাঠান বেঞ্চামিন পাভার্ড। তাতে ম্যাচে ফেরে সমসা। ৬৪ মিনিটে কালিয়ান এমবাপে দুর্দান্ত এক গোল করে এগিয়ে নেন ফ্রান্সকে। ৬৭ মিনিটে নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন পিএসজির এই স্ট্রাইকার। তাতে ফ্রান্স এগিয় যায় ৪-২ ব্যবধানে। যোগ করা সময়ে কুন আগুয়েরো হেডে গোল করে ব্যবধান কমান। কিন্তু তার গোলটি হার এড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। তখন যে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
ম্যাচে ৫৯ শতাংশ বলের দখল ছিল আর্জেন্টিনার কাছে। তারা ৫৪৯টি পাস দিয়েছে। মেসি-আগুয়েরোরা ৯৬ কিলোমিটার দৌড়েছেন। অন টার্গেটে শট নিয়েছেন ৪টি। কর্নার পেয়েছেন ৪টি! কিন্তু সব পরিসংখ্যানই বৃথা হয়ে গেল গোলের কাছে। দিনশেষে ১ গোলে এগিয়ে থাকায় বিজয়ী দলের নাম ফ্রান্স। বিজিত দল আর্জেন্টিনা। বিদায়ী দলও তারা।