গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১৩০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তাসহ ৯৮ জন, বান্দরবানে ৭ জন এবং চট্টগ্রামে ২৫ জন মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এখনও মাটির নিচে অনেকে চাপা পড়ে আছেন। সোমবার (১২ জুন) মধ্যরাতে থেকে মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাত পর্যন্ত প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটেছে।
রাঙামাটি শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ৯৮ জন নিহত হয়েছেন। জেলার জেলা প্রশাসক মানজুরুল মান্নান জানান, রাঙামাটি সদরে দুই সেনা কর্মকর্তা ও দুই সেনা সদস্যসহ ৫৩ জন, কাপ্তাইয়ে ১৮ জন ও কাউখালীতে ২৩ জন, বিলাইছড়িতে ২ জন ও জুড়াইছড়িতে ২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাঙামাটি সদর হাসপাতালে আহত ৫৬ জন ভর্তি রয়েছেন।
রাঙামাটিতে সোমবার থেকে শুরু হওয়া বর্ষণে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে ধসে পড়ে। ধসে পড়া মাটির নিচে এখনও অনেকে চাপা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজ চালাতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়ক যান চলাচল স্বাভাবিক করতে গিয়ে ক্যাম্পের পাহাড় ধসে চার সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, করপোরাল আজিজ, সৈনিক শাহীন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি সেনাবাহিনীর আঞ্চলিক মুখপাত্র। এছাড়া আহত ৫ সেনা সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। এরা হচ্ছেন সৈনিক আজমল, মামুন, ফিরোজ, মোজাম্মেল ও সেলিম।
এদিকে, টানা বর্ষণে বান্দরবানের কালাঘাটা এলাকায় তিনটি স্থানে পাহাড় ধসে পড়েছে। এতে তিন শিশুসহ ৭ জন প্রাণ হারিয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ২ জন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। সোমবার রাত ৩টার দিকে প্রবল বর্ষণের সময় কালাঘাটা এলাকার কবরস্থানের পাশে, জেলেপাড়া ও লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
কালাঘাটের কবরস্থানের পাশে পাহাড় ধসে রেবা ত্রিপুরা (১৮) নামের এক শিক্ষার্থী মাটি চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। জেলেপাড়ায় পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়েন মা-মেয়ে। তারা হলেন, কামুরননাহার ও সুফিয়া। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে দমকল বাহিনী।
লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে এক পরিবারের তিনটি শিশু প্রাণ হারিয়েছে। তারা হলো শুভ বড়ুয়া (৮), মিঠু বড়ুয়া (৬), লতা বড়ুয়া (৫)।
এছাড়া কুহালং ইউনিয়নের পূর্ব ধোপাছড়ি এলাকার সম্বুনিয়া পাড়ায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন। মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন মংকাউ খেয়াং (৫৫) মেম্রাউ খেয়াং (১৩) ও ক্যসা খিয়াং (৭)। এসময় চাইহ্লাউ (৩৫) ও সানু খেয়াং (১৮) নামে দুজন আহত হয়েছেন।
বান্দরবান সিভিল সার্জন বলেন, জেলার দুর্গম এলাকায় অনেক জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আর মঙ্গলবার পাহাড় ধসে ভোরে চট্টগ্রামের চন্দনাইশে ৪ জন ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ২১ জন নিহত হয়েছেন।