বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের গাফিলতিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।
এ ঘটনায় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিমান পরিবহন সংস্থার ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে বুধবার রাতে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এই কর্মকর্তারা হলেন- বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মকর্তা এস এস রোকনুজ্জামান, সামিউল হক, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস ও জাকির হোসাইন এবং কারিগরি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান।
গত রোববার হাঙ্গেরি সফরে রওনা হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের একটি বোয়িং ৭৭৭ বিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাতে জরুরি অবতরণ করে।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের সেখানে চার ঘণ্টা অনির্ধারিত যাত্রাবিরতি করতে হয়। ত্রুটি মেরামতের পর ওই উড়োজাহাজেই প্রধানমন্ত্রী বুদাপেস্টে পৌঁছান।
এ ঘটনা তদন্তে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তিনটি তদন্ত কমিটি করে।
এর মধ্যে বিমানের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন বুধবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের গাফিলতিতেই প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এই ঘটনায় বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, বিমানের তেল সঞ্চালন পাইপের ‘নাট ঢিলা’ হয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ক্রটি দেখা দিয়েছিল।
“বিমানের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তিনটি ফ্যাক্টর বিবেচনায় আনা হয়েছে- যান্ত্রিক ত্রুটি কি না? পরিবেশগত ব্যাপার কি না (বেশি ঠাণ্ডা বা ঝড় কি না) এবং হিউম্যান ফ্যাক্টর ইনভল্ব কি না?
“হিউম্যান ফেইলর ফ্যাক্টর প্রধান বলে তারা চিহ্নিত করেছেন। হিউম্যান ফেইলর ফ্যাক্টরকে চিহ্নিত করার ভিত্তিতে পাঁচজন অথবা এক-দুজন বেশিও হতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছে। আশা করি আজ রাত বা কাল সকালের মধ্যে সে ব্যবস্থা তারা নেবেন।”
মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের ২০ মিনিটের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়।
তিন দিনের হাঙ্গেরি সফর শেষে বুধবার রাত ১১টায় দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পৌছানোর আগেই বিমানে ত্রুটির জন্য ‘দায়ীদের’ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিল বিমান কর্তৃপক্ষ, যে ঘোষণা ঘটনার পরদিন দিয়েছিলেন মন্ত্রী মেনন।
মেনন বলেন, “এটা একেবারেই প্রিলিমিনারি রিপোর্ট। ভিভিআইপির ক্ষেত্রে একদিন আগে সিকিউরিটিদের হাতে বিমানটি হ্যান্ডওভার হয়ে যায়। সেই মুহূর্তে স্পেসিফিক যারা দায়িত্ব ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট যখন হবে তখন বোঝা যাবে কারা নির্দিষ্টভাবে দায়ী।”
কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ক্রটির ঘটনাকে মন্ত্রী হিসেবে কীভাবে দেখছেন- এ প্রশ্নে মেনন বলেন, “খুব স্বাভাবিকভাবেই বিমানের অদক্ষতার প্রমাণ হচ্ছে এটা। বিমানের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা সব সময়ই হচ্ছে।”
বিমানকে ঢেলে সাজানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটাতে গভর্নমেন্টের সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে। আমরা বসব, কথাবার্তা বলব।”
এই ঘটনায় বিমানের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে কি না- এমন প্রশ্নে মেনন বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের ঘটনা ঘটলে মানুষের আস্থার ক্ষেত্রে একটা সংকট সৃষ্টি হয়। বিমান যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয় সেটা করব।”
“বিমানে ভিভিআইপি চলাচলের যে এসওপি (পরিচালন পদ্ধতি) তা রিভিউ করা হবে। তাতে যদি কোনো প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হয়, তা আনা হবে।”
মন্ত্রী বলেন, “বিমানের যে আইনটি রয়েছে তাতে সেটি একটি কোম্পানি। মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ ততটুকুই যতটুকু তারা আমাদের জানান, তার বাইরে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বোর্ডে আমাদের সচিব মহোদয় আছেন, তিনি বোর্ড থেকে যেটুকু নিয়ে আসেন সেটুকু নিয়ে কথা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেভাবে আইন করেছে সেভাবেই হয়েছে। এটা না হয়েছে কোম্পানি না হয়েছে সরকারি।”
বিমান সচিব এস এম গোলাম ফারুকও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।