বন্যায় এ পর্যন্ত ১০৭ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩ লাখ ২৭ হাজার মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর এসব তথ্য জানিয়েছে। দেশের ২২ জেলা এখন বন্যার কবলে। বন্যা উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছাড়িয়ে এখন দেশের মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃত হচ্ছে। বন্যাকবলিত এসব অঞ্চলে খাদ্য ও খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে লালমনিরহাট ও দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি কমতে থাকায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কুড়িগ্রামের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়, যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র, সুরমা ও কুশিয়ারার পানি কমছে। যমুনা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল হতে পারে। গঙ্গা-পদ্মার পানি আর ৭২ ঘণ্টা বৃদ্ধি পেতে পারে। কেন্দ্রের ৯০টি পয়েন্টের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে ৬০টি পয়েন্টে, কমছে ২৬টি পয়েন্টে ও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ২৯টি পয়েন্টে। উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর পানিও বাড়তে শুরু করেছে; তবে তা এখনও বিপদসীমার নিচে রয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজনীন শামীমা জানান, বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ২২ জেলার তথ্য পেয়েছেন তারা। এসব জেলায় বন্যায় ৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২টি পরিবারের ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৬৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর ও রাঙামাটি জেলার ১২২টি উপজেলা ও ৩৮টি পৌরসভা এখন বন্যায় প্লাবিত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দিনাজপুর জেলায়। এ জেলার ১৩টি উপজেলার সবই বন্যাকবলিত। তবে এ হিসাবের বাইরে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা ও শরিয়তপুরে পদ্মা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যাজনিত কারণে গত জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি জানান, বন্যায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের এবং ৪৮ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা ২৪ জন। এই ১০৭ জনের মধ্যে ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। আর সাপের দংশনে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, বজ্রপাতে মারা গেছে দুজন, এছাড়া অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। বন্যাদুর্গত জেলাগুলোর মধ্যে জামালপুরে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানান আবুল কালাম। এ জেলায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া সিরাজগঞ্জে ২৩ জন, কুড়িগ্রামে ১৯ জন, গাইবান্ধায় ১১ জন, দিনাজপুরে ৭ জন, লালমনিরহাটে ৬ জন, নীলফামারীতে ৫ জন ও কক্সবাজারে ৩ জন মারা গেছে। দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ১৯টি নদীর মধ্যে ইছামতি নদী ছাড়া ১৮টি নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া কিছু কিছু মানুষ ঘরে ফেরা শুরু করেছে। গতকাল বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে এ পর্যন্ত দিনাজপুরে বন্যায় পানিতে ডুবে, সাপের কামড়ে ও দেয়াল চাপা পড়ে ২৯ জনের মৃত্যু হল। তবে দিনাজপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতর ২৫ জনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছে। দিনাজপুর সদর উপজেলার ষষ্ঠিতলা (হাড্ডিগোডাউন) এলাকার আনিছুর রহমানের ছেলে আশিকের লাশ পুনর্ভবা নদীর পাশে ধানক্ষেত থেকে ও বিরল রানীপুকুর ইউপির কাজীপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমানের কন্যা মিনি আকতারের (৪) লাশ বাড়ির পাশের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।অপরদিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে করতোয়া নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে দুলাল মিয়া (৩৫) নদীর পানিতে ডুবে মারা যান। তিনি পার্বতীপুর উপজেলার আটরাই গ্রামের জয়নুদ্দিনের ছেলে। আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, জেলায় ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত থাকলেও দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসিদের। ধরলার পানি সামান্য হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৯ উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষ। ঘরবাড়ি ছেড়ে বানভাসিরা আশ্রয় নিয়েছে পাকা সড়ক উচু বাঁধ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গত তিন দিনে বন্যার পানিতে ডুবে ও সাপের কামড়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে দুজন। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। বানভাসিরা গবাদি পশু নিয়ে পাকা সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়ে গাদাগাদি করে বসবাস করছে। বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। সরকারি, বেসরকারিভাবে সামান্য ত্রাণ তত্পরতা শুরু হলেও তা পৌঁছেনি দুর্গম এলাকাগুলোতে। ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ বন্যাদুর্গত এলাকার বেশিরভাগ মানুষের।
গাইবান্ধাঃ জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। করতোয়া নদীর পানির চাপে করতোয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের তিনটি অংশ ভেঙে গেছে। ফলে নতুন করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ও পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর, কিশোরগাড়ি ও বরিশাল ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এই নিয়ে জেলার ছয়টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ফুলছড়ি উপজেলার একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কটি হুমকির মুখে পড়েছে। সেখানে বালির বস্তা দিয়ে সড়ক রক্ষার চেষ্টা চলছে। অপরদিকে পানির চাপে গাইবান্ধা শহররক্ষা ও ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অসংখ্য স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। মানুষের দুয়েক বেলা খাদ্য জুটলেও গবাদি পশুর খাদ্য সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলায় সরকারিভাবে ৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ওইসব কেন্দ্রে ৪ হাজার ১৭৭ বানভাসি মানুষ বসবাস করছে। এ ছাড়া বন্যার পানি ওঠায় জেলার ১১২টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বদরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, রংপুরের বদরগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে দুলাল মিয়া (৪৫) ও হূদয় (১২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউপির বুজরুক বাগবাড় ও কুতুবপুর ইউপির নাগেরহাট গাছুয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, দুলাল মিয়া মুঠোজাল নিয়ে বানের পানিতে মাছ ধরতে যায়। এ সময় পানির স্রোতে সে তলিয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এলাকাবাসীর সহায়তায় লাশ উদ্ধার করে। এদিকে শিশু হূদয় বন্যার পানি দেখতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ফায়ার সার্ভিস এলাকাবাসীর সহায়তায় শিশুটির লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। দুলাল মিয়া উপজেলার বুজরুক বাগবাড়ের আফতাব হোসেনের ছেলে। শিশু হূদয় মিঠাপুকুর উপজেলার ময়েনপুর গাছুয়াপাড়ার মোকছেদুল হকের ছেলে। বদরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার গোলজার হোসেন লাশ দুটি উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এলাকাবাসীর সহায়তায় লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়।
লালমনিরহাটঃ জেলার তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির গতকাল আরও উন্নতি হয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলার বেশ কিছু এলাকা থেকে ইতোমধ্যে পানি নেমে গেছে। এসব এলাকায় বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি মানুষজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। বন্যার্ত পরিবার পুনর্বাসনে এবং দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠতে গতকাল থেকে লালমনিরহাটের বিজিবিসহ সেনাবাহিনীর তিনটি টিম মাঠে কাজ করছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় রংপুর সেনানিবাসের সদস্যরা মানুষদের চিকিত্সা সেবা ও ওষুধপত্র দিচ্ছেন।
নীলফামারীঃ জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। তবে বন্যাকবলিত দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এদিকে গতকাল সারাদিন তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আগামী ৩-৪ দিন পানি বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর ডিভিশনের হাইড্রোলজি বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম।
জয়পুরহাটঃ জেলার তুলসীগঙ্গা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আক্কেলপুর শহররক্ষা বাঁধসহ কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধ রক্ষার্থে কাজ করছে স্থানীয়রাসহ পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা।
নাটোরঃ লালপুর উপজেলার পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন না থাকলেও নদীর বাম তীর রক্ষায় নির্মিত সিসি ব্লকের তৈরি নদী ভাঙন রোধ ব্যবস্থার চারটি পয়েন্ট ধসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নদীতীরবর্তী ছয় গ্রামের মানুষ।
নওগাঁঃ জেলার মান্দায় আত্রাই নদীর বাঁধ ভেঙে ১১টি ইউনিয়নের ৪২টি গ্রামের ১৮৬২০টি পরিবারের ৭০৪৮০ জন মানুষ এখন পানিবন্দি রয়েছে। গতকাল সকাল থেকে নওগাঁ শহরের ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহরও প্লাবিত হয়েছে। এতে নওগাঁ পৌরসভাসহ ৮টি ইউনিয়নের ১৫০টি গ্রামের ২৭৪০ পরিবার ও ১৮ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি রয়েছে। বগুড়া অফিস জানায়, বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। তবে গতকাল দুপুরের পর যমুনার পানি স্থিতাবস্থায় রয়েছে। পানির প্রবল চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ১০টি স্থান হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আর আতঙ্ক বাড়ছে। বাঁধ ভাঙার আশঙ্কায় মানুষ রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের স্থান থেকে বাড়িঘর ভেঙে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। গত দুই দিন ধরে ধুনট ও সারিয়াকান্দির মানুষ রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছে। পানি এত বেশি বেড়েছে যে, অনেক স্থানে বাঁধ উপচে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বন্যাকবলিত তিন উপজেলা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ৯১টি গ্রামে পানি উঠেছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সিরাজগঞ্জঃ জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শহরের রানীগ্রাম বটতলা-খোকশাবাড়ী রিং বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সেনাবাহিনীর একটি দল সার্বক্ষণিকভাবে এই বাঁধ পর্যবেক্ষণে রয়েছে। যেকোনো সময় এই বাঁধ ভেঙে পানি ভেতরে প্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যমুনার পানি বাঁধ উপচে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাঁধের তিনটি দুর্বল পয়েন্টে জরুরি মেরামত কাজ চলছে। এদিকে শাহজাদপুরের গোপালপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় তিনশ’ ফুট পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। এতে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী, জালালপুর, বেলতৈল ইউনিয়নের অন্তত এক হাজার একর জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে। তিনটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ১৬টি গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় যমুনার পানি বিপদসীমার ১৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তাড়াশঃ সিরাজগঞ্জে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় দুই হাজার হেক্টর আবাদি রোপা আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে। শিবচর সংবাদদাতা জানান, পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মাবেষ্টিত জনবিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শত শত ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ফরিদপুরঃ জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যার পানিতে সদর উপজেলার নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। তলিয়ে গেছে কয়েকশ’ হেক্টর জমির নানা প্রজাতির ধানসহ সবজির ক্ষেত। বেশ কয়েকটি স্কুল-মাদ্রাসায় পানি ওঠায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ফরিদপুর শহররক্ষা বাঁধের মোহাম্মদপুর বাজারের কাছে বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় শহরজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ফরিদপুরের সদরের চার ইউনিয়নে বন্যাকবলিতদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মানোস বোস।
জামালপুরঃ জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। যমুনার ভাঙনে দেওয়ানগঞ্জের বরখাল এলাকার শতাধিক বাড়িঘর এরই মধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। মেলান্দহ উপজেলায় গতকাল বন্যার পানিতে পড়ে এক স্কুলছাত্র নিহত ও দুজন নিখোঁজ হয়। পুলিশ জানায়, মেলান্দহ পৌর এলাকার নাগেরপাড়া গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে জিল্লুর রহমান (১৬) ও একই উপজেলার নলবাড়ী গ্রামের ময়না শেখের ছেলে সজীব আহমেদ (১৬) দুপুরে ওই উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের ভালুকা গ্রামে বন্যার পানি দেখতে যায়। এ সময় মোবাইল ফোনে সেলফি তুলতে গিয়ে সজীব ও জিল্লুর রহমান পানির প্রবল তোড়ে ভেসে যায়। তাদের বাঁচাতে পথচারী লাল মিয়া পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লে সেও পানির স্রোতে ভেসে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল বিকেলে জিল্লুরের মৃতদেহ উদ্ধার করলেও অপর দুজন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। পুলিশ জানায়, নিহত জিল্লুর ও নিখোঁজ সজীব মেলান্দহ উমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। জামালপুর রেল স্টেশন মাস্টার মির্জা শামছুল আলম জানান, বন্যার পানিতে রেললাইন ডুবে যাওয়ায় গতকাল সকাল থেকে বন্ধ করা হয়েছে জামালপুর-তারাকান্দি-বঙ্গবন্ধু সেতু রুটে ট্রেন চলাচল। বিভিন্ন স্থানে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় জেলার ৮১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এদিকে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ বিভিন্ন সরকারি দফতর।
জামালপুরঃ জামালপুর জেলার সাতটি উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নের ছয় লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এলাকায় কর্মসংস্থান, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
টাঙ্গাইলঃ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল যমুনার পানির তোরে তারাকান্দি-ভূঞাপুর সড়ক হুমকির মধ্যে পড়েছে। এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল শহররক্ষা বাঁধের সদর উপজেলার পাছ বেথৈর এলাকায় পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হযেছে। সদর উপজেলার নওগাঁ গ্রামে মঙ্গলবার রাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে করে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ২০টি গ্রাম নতুন করে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে কালিহাতী উপজেলার হাতিয়া লৌহজং নদীরক্ষা বাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম নতুন করে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলেরর অর্জুনা ইউনিয়নের পুরোটাই এখন পানির নিচে। যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত পাঁচ দিনে ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের সবই তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এই ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ।
সিলেটঃ সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা নদীর পানি অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
বড়লেখাঃ ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যার প্রভাবে দেশের সর্ববৃহৎ হাকালুকি হাওরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাওরপাড়ের মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের দীর্ঘ প্রায় ৪ মাসের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গত সপ্তাহ ধরে পুনরায় পানি বাড়তে থাকে। কুলাউড়া-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েকটি স্থান নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দোহারঃ পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যার পানিতে ডুবতে শুরু করেছে ঢাকার পার্শ্ববর্তী দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল। প্লাবিত হয়েছে শত শত বাড়িঘর। এদিকে পদ্মার পানির তীব্র সে াতে মঙ্গলবার রাতে দোহার উপজেলার নয়াবাড়ী ইউনিয়নে চলমান ২১৭ কোটি টাকার পদ্মা বাঁধ প্রকল্পের চারটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নবাবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, পদ্মার পানিতে নবারগঞ্জের নিম্নাঞ্চলেও প্লাবিত হয়েছে।