শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
বাংলাদেশে এসেছে ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা : জাতিসংঘ
প্রকাশ: ০৯:২৩ am ০৯-০৯-২০১৭ হালনাগাদ: ০৯:২৪ am ০৯-০৯-২০১৭
 
 
 


জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক মানবাধিকার বিশেষ প্রতিনিধি ইয়াংহি লি গতকাল এএফপিকে বলেছেন, মিয়ানমারে সহিংসতায় ইতোমধ্যে ১ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগ সংখ্যালঘু মুসলমান, যা সরকারি হিসাবের তুলনায় দ্বিগুণ। তিনি অং সান সু চিকে এ ব্যাপারে নির্ভয়ে খোলামেলা আলোচনা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ বলেছে, গত দুই সপ্তাহে ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিক পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থী শিবির ও আশপাশের এলাকায় এদের থাকার দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অথচ দু’দিন আগেও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সর্বশেষ দফায় ১ লাখ ৬২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলে উল্লেখ করছিলেন। অর্থাত্ জাতিসংঘের হিসাবেই গত দু’দিনে এক লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। সীমান্ত পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গাদের আসার ধারা পর্যালোচনা করে জাতিসংঘ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং রেডক্রসসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এই দফায় শরণার্থীর সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। বাসস/বিবিসি বাংলা। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক মানবাধিকার বিশেষ প্রতিনিধি ইয়াংহি লি বলেছেন, ‘সম্ভবত ইতোমধ্যে ১ হাজার বা তারও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে।’ বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে এবং এদের বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য করে থাকে। যদিও তারা মিয়ানমারে যুগ যুগ ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশ সর্বশেষ রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। ইতোমধ্যে সীমান্তের শিবিরে ও অন্যান্য এলাকায় ৬ লাখ ৭০ হাজার মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ বলেছে, রাতভর পালিয়ে আসার কারণে এর আগে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা গণনা করা হয়নি। এর আগে জাতিসংঘের হিসাবে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার। কিন্তু জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত বুধবার অন্তত তিনশ’ নৌকায় করে মিয়ানমারের বিপুল সংখ্যক নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করায় এ সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় প্রবল সে াতের কবলে পড়ে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। এদের বেশিরভাগ শিশু। শরণার্থীদের যেভাবে স্থানীয় গ্রামবাসীরা আশ্রয় দিচ্ছে তার প্রশংসা করে বাংলাদেশে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান বলেন, তারা যথেষ্ট উদারতার পরিচয় দিচ্ছে। তিনি জানান, শরণার্থীরা সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আছে দুটি শিবির নওয়াপাড়া এবং কুতুপালংয়ে। কিন্তু এই দুটি শিবিরে আর জায়গা নেই। এ ছাড়া বালুখালী এবং লেডায় অনেক নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। শরণার্থীরা রাস্তার দু’পাশে যেখানেই খালি জায়গা পেয়েছে, সেখানেই তাঁবু খাটিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ান শিক্ষাবিদ ইয়াংহি লি এএফপিকে বলেছেন, তিনি আশঙ্কা করছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটি বিশ্ব ও মিয়ানমারের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়। তিনি যে পরিসংখ্যান দেখিয়েছেন, তা সরকারি হিসাবের তুলনায় অনেক বেশি। এর আগে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বলেছিল তারা কেবল ৩৮৭ রোহিঙ্গা জঙ্গিকে হত্যা করেছে। এদিকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, আগস্ট হামলার পর তারা নিরাপত্তা বাহিনীর ১৫ সদস্যকে হারিয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৫ আগস্টের পর রোহিঙ্গাদের ৬ হাজার ৬শ’ এবং ২০১টি অমুসলিমদের বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তারা আরও জানায়, ওই সময় সংঘর্ষে প্রায় ৩০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। এদের মধ্যে সাতজন রোহিঙ্গা, সাতজন হিন্দু এবং ১৬ জন রাখাইন বৌদ্ধ। ৭০ লাখ ডলার সহায়তা দেবে জাতিসংঘ : গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মার্ক লোকক ঘোষণা দেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সেন্ট্রাল ইমারজেন্সি রেসপন্ড ফান্ড থেকে ৭০ লাখ ডলার সহায়তা দেবে জাতিসংঘ। তিনি বলেন, এই তহবিল দিয়ে প্রয়োজনীয় আবাস, খাবার, চিকিত্সাসেবা নিশ্চিত করা হবে। বিশেষ করে নারীদের এই সহায়তা অনেক বেশি প্রয়োজন। এ ছাড়া এমন সময় এই সঙ্কট শুরু হয়েছে যখন বন্যা ও ভূমিধসের কারণে সমস্যায় রয়েছে বাংলাদেশ। আগেও এই তহবিল থেকে বন্যাদুর্গতদের সহায়তা করেছিল জাতিসংঘ। নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত সরকারের : সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরির কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা এসেছে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে তালিকা করা বা অন্য বিষয়গুলোতে ঘাটতি হয়েছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেন বলেছেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের এক জায়গায় নিয়ে আগামী সপ্তাহে এই নিবন্ধনের কাজ শুরুর চেষ্টা আমরা করছি। কুতুপালং এবং নোয়াপাড়ায় শরণার্থী শিবিরগুলোতে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের একটা অংশকে নেওয়া হয়েছে। কুতুপালং শরণার্থী শিবির এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নূরুল আফসার চৌধুরী বলেন, কুতুপালং এবং বালুখালী শিবিরের বাইরে খোলা জায়গা রাস্তাঘাট সব জায়গায় শুধু মানুষ আর মানুষ। কোনো নিয়ম বা পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের খাদ্য বা মানবিক সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা এখনও হয়নি। ফলে খাদ্য কষ্টে ভুগছে শিশুরাও।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT