মঙ্গলবার পিলখানায় বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, “সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা আমাদের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আপনাদের প্রচেষ্টায় বিএসএফের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারের ফলে সীমান্তে নিহতের ঘটনা কমে এসেছে।”
পাশাপাশি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের ফলে চোরাচালান, মাদক ও নারী-শিশু পাচার এবং সীমান্ত অপরাধ বহুলাংশে কমেছে বলে জানান সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা পিলখানায় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিজিবি দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌছালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন তাকে স্বাগত জানান।
কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী চলতি বছর বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিজিবি সদস্যদের মধ্য থেকে ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক (বিজিবিএম), ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক (পিবিজিএম), ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক-সেবা (বিজিবিএমএস) এবং ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক-সেবা (পিবিজিএমএস) পড়িয়ে দেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সীমান্তরক্ষাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা, দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতিতে বিজিবি সদস্যদের ভূমিকা ও পেশাদারিত্বের প্রশংসা করেন।
“সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বছর পূর্তি উপলক্ষে বিএনপি এবং জামায়াত শিবিরের জ্বালাও-পোড়াও এবং পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্য সৃষ্টির অপতৎপরতা প্রতিহত করতে আপনারা যে দক্ষতা দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ‘গৌরবময় ও সমৃদ্ধ ইতিহাস’ কথাও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
তিনি বলেন, “এই বাহিনী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
“১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে তৎকালীন ইপিআর এর বেতারকর্মীরা এই পিলখানা থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র দেশে প্রচার করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসযোগে প্রচার করায় ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ তিনজনকে পাক হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে।”
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহকে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের একটি কালো অধ্যায় হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সে সময় সরকার গঠনের পরপরই বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের মতো ন্যাক্কারজনক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাদের মোকাবিলা করতে হয়।”
বিজিবির শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ‘দূরদর্শী’ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিডিআর বিদ্রোহের চক্রান্তকারীদের সকল অপতৎপরতা আমরা ধৈর্য ও সতর্কতার সাথে মোকাবেলা করেছিলাম।
“বিজিবি সদস্য হিসেবে আপনাদের বিশ্বস্ততা পরীক্ষিত। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিজিবি এখন একটি গতিশীল ও আধুনিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আপনাদের কঠোর পরিশ্রমে এ বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
বিজিবিকে আধুনিক ও যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসাবে গড়ে তুলতে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ করার পাশাপাশি এই বাহিনীকে আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পরে প্রধানমন্ত্রী টপড্রিল, ডগ স্কোয়াডের ড্রিল দেখেন এবং বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে দরবারে বক্তব্য রাখেন।
এর আগে বিজিবি দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টায় পিলখানায় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন করেন এবং ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।