ভারতে নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত মানুষের স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এই অধিকার দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এই রায় দেন। রায়ে বলা হয়, সবার জন্য স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি নয়। রোগ সেরে ওঠার আর কোনো রকম সম্ভাবনা নেই, এই রকম রোগীকেই স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হবে। তবে সেই মৃত্যুও হবে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত সাপেক্ষে।
ওই রায়ে বলা হয়, যাঁদের সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চলছে তাঁদের জন্যই কেবল স্বেচ্ছামৃত্যু। তবে এর জন্য অবশ্যই মেডিকেল বোর্ডের সম্মতি লাগবে। আর সেই সম্মতি ছাড়া স্বেচ্ছামৃত্যু সম্ভব নয়। কেবল মেডিকেল বোর্ড সম্মতি দিলেই ওই রোগীদের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম সরিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু দেওয়া হবে। স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য অসুস্থ ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা কেবল আবেদন করতে পারবেন। তবে শেষ সিদ্ধান্ত নেবে মেডিকেল বোর্ড।
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র বলেন, সম্মানজনক মৃত্যু পাওয়ার অধিকার প্রতিটি মানুষের রয়েছে। কোনো ব্যক্তির ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাঁকে কৃত্তিমভাবে বাঁচিয়ে রেখে সেই অধিকার খর্ব করা যাবে না। স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে আইন প্রণয়ন করার নির্দেশও কেন্দ্রকে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আর সেই আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত নির্দিষ্ট একটা গাইড লাইনও তৈরি করে দিয়েছেন শীর্ষ আদালত।
দেশটির আইন অনুযায়ী, সেরে ওঠার সম্ভাবনা না থাকলেও যতক্ষণ রোগীর হৃদযন্ত্র সচল থাকবে ততক্ষণ চিকিৎসা বন্ধ করা যায় না। সেখানে দাঁড়িয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে গত সাত বছর ধরে ভারতে বিতর্ক চলছে।
১৯৭৩ সালে ভারতের মুম্বাইতে অরুনা শানবাগ নামে এক নার্সকে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনার পর টানা ৪২ বছর ধরে হাসপাতালে ‘কোমা’য় ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে নির্যাতিতা অরুনা শানবাগের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছিলেন সাংবাদিক পিংকি ভিরানি। তখন অবশ্য সেই আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছিল। এরপর ২০১৫ সালে মারা যান অরুনা শানবাগ।
তখনকার মতো বিষয়টি ধামাচাপা পড়লেও সম্প্রতি মানুষের সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার অধিকারের স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ফের মামলা করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতেই এই ঐতিহাসিক রায় দেন ভারতের শীর্ষ আদালত।