রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের কারণে মিয়ানমারের সেনা প্রধানসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সব ধরনের আমন্ত্রণ স্থগিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
সোমবার লুক্সেমবুর্গে জোটের সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অংশগ্রহণে পররাষ্ট্র বিষয়ক কাউন্সিলে এই প্রস্তাব পাস হয় বলে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়।
লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে শরণার্থী সঙ্কট অবসানে ঢাকার সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইয়াঙ্গুনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিল।
গত ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর সেনা অভিযানের মধ্যে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম এই পর্যন্ত পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, সীমান্তে মাইন পুঁতে রাখার অভিযোগ জানিয়েছে।
এই ঘটনার শুরু থেকে মিয়ানমারের ভূমিকার সমালোচনা করে আসা ইউরোপীয় কাউন্সিল রোহিঙ্গা নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সেনা অভিযান এখনই বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
ইউরোপের দেশগুলোর জোটের বৈঠকে পাস হওয়া প্রস্তাবে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর বলপ্রয়োগের আলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এর সদস্য দেশগুলো মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান এবং জ্যেষ্ঠ অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের সব আমন্ত্রণ স্থগিত করবে।”
পাশাপাশি মিয়ানমারে সঙ্গে যেসব প্রতিরক্ষা চুক্তি ইউরোপের দেশগুলোর রয়েছে, তা পর্যালোচনার কথাও জানিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিল।
অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ দমনে ব্যবহারে মিয়ানমারকে সমরাস্ত্র সরবরাহে যে বিধি-নিষেধ রয়েছে, এই পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটালে তা আরও কঠোর করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো।
সেনা অভিযানে নির্যাতনের যে অভিযোগগুলো উঠেছে, তা তদন্তের জন্য হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল গঠিত ফাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে অবাধ সুযোগ দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের যে প্রতিশ্রুতি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি দিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিল। মিয়ানমারে গণতন্ত্রে যাত্রা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সমর্থনের কথাও প্রকাশ করে তারা।
শরণার্থীদের নিয়ে কঠিন পরিস্থিতি সামলাতে বাংলাদেশ যে গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছে, প্রস্তাবে তার প্রশংসা করা হয়। বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও আসে।
শরণার্থীদের পুনর্বাসনে প্রতিবেশীদের বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আহ্বান জানানো হয় মিয়ানমারকে।
এশিয়া-ইউরোপ সামিটভুক্ত (আসেম) দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসন্ন সম্মেলনে বিষয়টি আলোচনায় আসবে বলে আশা করছে ইউরোপের দেশগুলো।
রাখাইনে জাতিসংঘের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন ও দাতব্য সংস্থাকে কাজ করতে দিতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানায় ইউরোপীয় কাউন্সিল।
সেখানে কোনো ধরনের ভেদাভেদ না করে সব মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেও বলা হয় দেশটির সরকারকে।
রাখাইনে সঙ্কট অবসানে কফি আনান নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারকে সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো।