মেট্রোরেল নির্মাণে চার লেন করা হচ্ছে মিরপুর ডিওএইচএস গেট থেকে মিরপুর-১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়ক। এজন্য ব্যয় হবে ১১৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সম্মতি নিয়ে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু করেছিল পরিকল্পনা কমিশন।
ইতিমধ্যেই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় বিভিন্ন ব্যয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। পরবর্তীতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠনের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হলেও এখনও সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে আসেনি বলে জানা গেছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিদ্যমান সড়ক চার লেনে উন্নীত করার পাশাপাশি আরও বিভিন্ন কার্যক্রম করা হবে। এগুলো হচ্ছে, মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ এর পিয়ার স্থাপনের জন্য রাস্তা প্রশস্ত করা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নতকরণ, প্রকল্প এলাকায় বিদ্যমান ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তর, পথচারীদের ফুটপাত ব্যবহারের সুবিধা দেয়া এবং এমআরটি লাইন নির্মাণ কাজের সময় দক্ষ ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুততম উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়ও মেট্রোরেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। সরকার অনুমোদিত এমআরটি লাইন-৬ এর অ্যালাইনমেন্ট উত্তরার তৃতীয় পর্ব ডিপো এলাকা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট, পল্লবী, রোকেয়া সরণি, ফার্মগেট, শাহবাগ, টিএসসি ও প্রেসক্লাব হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মতিঝিল পর্যন্ত বিস্তৃত। এ প্রকল্পে নির্মাণ কাজের সময় প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্ট বরাবর ১১ মিটার জায়গা প্রশস্ত করার বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
এমআরটি লাইন-৬ এর ভায়াডাক্ট এর প্রি-কাস্ট গার্ডার পরিবহনের জন্য এই রাস্তাটি একমাত্র পথ। বিদ্যমান রাস্তাটি প্রশস্ত করা না হলে এমআরটি-৬ এর নির্মাণ কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া আশপাশের বসবাসকারী জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীদের চলাচলে বিঘœ ঘটবে। রাস্তাটি মিরপুর ডিওএসএইচ, মিরপুর-১২ এবং কালশী মোড়ের মধ্যে একমাত্র সংযোগ সড়ক হওয়ায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া রাস্তাটিতে মেট্রোরেলের স্টেশন থাকবে বলে ভবিষ্যতে এ সড়কে ট্রাফিক চাহিদা অধিক হারে বৃদ্ধি পাবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে ১১৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, শূন্য দশমিক ৫৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ, ইউটিলিটি স্থানান্তর, ৫১ হাজার ৬৪৩ দশমিক ১৭ ঘনমিটার মাটি কাটা ও ভরাট কাজ, পেভমেন্ট নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় এগুলো হচ্ছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের সঙ্গে এমআরটি লাইন-৬ এর সম্পৃক্ততা ও প্রকল্পটির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) মতামত জানা যেতে পারে। প্রকল্পের আওতায় ৩৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে শূন্য দশমিক ৫৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ও ব্যয় প্রাক্কলনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মাটির কাজের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা যথাযথ সমীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা সেটি জানতে চাওয়া হয়। ইউটিলিটি অপসারণ খাতে প্রস্তাবিত ৬০ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিভাজন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার চাহিদাপত্র সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
এছাড়া জেনারেল অ্যান্ড সাইট ফ্যাসিলিটিজ খাতে ৭৩ লাখ টাকা, বিবিধ উন্নয়ন ব্যয় খাতে ৫ কোটি টাকা এবং আনুষঙ্গিক খাতে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সেই সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় যানবাহন ক্রয় বা ভাড়ার সংস্থান না থাকলেও যানবাহনের গ্যাস ও জ্বালানি বাবদ ২০ লাখ টাকা, পেট্রুল ও লুব্রিকেন্ট বাবদ ১০ লাখ টাকা এবং মোটরযান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়। এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলে পরিকল্পনা কমিশন।