মিয়ানমার জাতিসংঘকে জোর দিয়ে বোঝাতে চেয়েছে যে, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তীব্র আন্তর্জাতিক সমালোচনার পর এখন মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাখাইনে সংকট কমছে।
গতকাল বুধবার দেশটির দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভ্যান থিও জাতিসংঘে এ কথা জোর দিয়ে বলেন। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির পরিবর্তে জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেন থিও। এর আগের দিনই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অং সান সু চি।
এএফপির খবরে জানা যায়, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মিয়ানমার থেকে পালানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে থিও অনেকটা সু চির মতোই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমি আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই যে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাখাইনে আর কোনো সহিংসতা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
থিও আরও বলেন, ‘মুসলিমদের এখনো আগের মতোই বাংলাদেশে যাওয়ার খবরে আমরা উদ্বিগ্ন। কেন মুসলিমরা পালাচ্ছে তা আমাদের খুঁজে বের করা প্রয়োজন।’
জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার সময় ভন থিও রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেননি। তিনি তাদের মুসলিম বলে অভিহিত করেন। মিয়ানমারে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ সম্প্রদায় এক ধরনের গালাগাল হিসেবে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করে।
জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পোড়ানো ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত চার লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ গত বুধবার এই অভিযানকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ভন থিও আরও দাবি করেন, সন্ত্রাসী হামলার পরই রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হয়েছে। অমুসলিমদের ওপরও ওর প্রভাব পড়েছে।
আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার সরাসরি উল্লেখ না করে ভন থিও সমর্থনের জন্য বাইরের দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান। থিও বলেন, প্রথমেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি মানবিক ত্রাণের বিষয়টি। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যারা অভাবে রয়েছে তারাই ত্রাণ পাচ্ছে। এ ব্যাপারে কোনো বৈষম্য চাই না।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অং সান সু চির বক্তব্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে হতাশ করেছে। নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী সু চিকে সামরিক জান্তা সরকার ১৫ বছর গৃহবন্দী করে রাখে। সে সময় তাঁর মুক্তির পক্ষে সোচ্চার ছিল এই মানবাধিকার সংস্থাগুলো। দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর গত মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মুখ খোলেন সু চি। কিন্তু তিনি মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিমূলক কথা বলেছেন বলে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা উঠেছে।
আন্তর্জাতিক সমালোচনার পাশাপাশি বিশ্লেষকেরা অবশ্য এও বলছেন, চাইলেও সেনাবাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্য সু চির নেই।