সিলেটের তারাপুর চা-বাগান বন্দোবস্ত নিয়ে মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইকে চারটি ধারায় মোট ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে তাদের উভয়কে ৪০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে এ রায় প্রদান করেন সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো।
আদালতের পিপি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ আদালতের রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রাগীব আলী ও আবদুল হাই প্রত্যেককে ৪৬৬ ধারায় ৬ বছর, ৪৬৮ ধারায় প্রত্যেককে ৬ বছর এবং ৪২০ ও ৪৭১ ধারায় প্রত্যেককে এক বছর করে-দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রত্যেককে ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ চার ধারায় তাদেরকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে এই মামলায় সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর শেষ হয় সাক্ষ্য। পরে সাফাই সাক্ষ্য শেষে গতকাল বুধবার মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়।
তারাপুর চা-বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে রাগীব আলী ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে এ বাগান দখল করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ১৯৯৯ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম আবদুল কাদের বাদী হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি এবং সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেন।
উচ্চ আদালতে গিয়ে রাগীব আলী মামলা দুটিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখেন। তবে গত বছরের ১৯ জানুয়ারি ওই মামলা দুটি পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দেন সুপ্রিমকোর্ট। এ ছাড়া তারাপুর চা বাগানের সকল স্থাপনা সরিয়ে নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ১৫ মে চা বাগান সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।
গত বছরের ১০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত সুপার সরোয়ার জাহান। স্মারক জালিয়াতি মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইকে আসামি করা হয়।
এ ছাড়া প্রতারণার মামলায় রাগীব আলী, তার ছেলে আবদুল হাই, মেয়ে রুজিনা কাদির, জামাতা আবদুল কাদির, নিকটাত্মীয় দেওয়ান মোস্তাক মজিদ, চা বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ গুপ্তকে আসামি করা হয়।
১০ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দিনই রাগীব আলী তার ছেলে আবদুল হাইকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। পরে ১২ নভেম্বর জকিগঞ্জ সীমান্তে গ্রেপ্তার হন আবদুল হাই। আর রাগীব আলী ২৩ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জে গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তারা জেলহাজতে রয়েছেন।
মামলা দুটির আসামির মধ্যে রাগীব আলী, আবদুল হাই ও দেওয়ান মোস্তাক মজিদ কারাগারে এবং পঙ্কজ গুপ্ত জামিনে রয়েছেন। রুজিনা কাদির ও আবদুল কাদির পলাতক।