দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকবিরোধী অভিযানকালে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজধানীর দক্ষিণখানে ১ জন, কুষ্টিয়ায় ২ জন, কুমিল্লায় ২, যশোরে ২, ময়মনসিংহে ১, ঠাকুরগাঁওয়ে ১, সাতক্ষীরা ১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন নিহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি নিহত সবাই মাদক ব্যবসায়ী।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এসব কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
ঢাকা: রাজধানীর দক্ষিণ খানে সোমবার দিবাগত রাত পোনে একটায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সুমন ওরফে খুকু সুমন নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।
এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ১ হাজার পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট ও একটি ওয়ান সুটার গান পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
যশোর: জেলায় সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুইজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত দুজন মাদক ব্যবসায়ী বলে পুলিশ দাবি করেছে।
যশোর কোতয়ালী থানার ওসি আজমল হুদা বলেন, যশোর শহরের চাঁচড়া রায়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দু’দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত হন ওই এলাকার সেকেন্দার আলীর ছেলে মানিক (২৭) ও সদর উপজেলার মণ্ডলগাতি গ্রামের জাহান আলীর ছেলে আহসান আলী (৫৬)। নিহত দুজনই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বলে জানান ওসি।
তিনি বলেন, মানিকের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় ৯টি ও আহসান আলীর বিরুদ্ধে ১১টি মাদক মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুইটি দেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও ৫টি গুলির খোসা এবং ৬শ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কুমিল্লা: জেলায় সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলার মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জর এলাকায় গোমতী প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশে ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ডের সামনে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায় অভিযুক্ত দুইজন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হচ্ছেন-লিটন ওরফে কানা লিটন (৪৩) এবং বাতেন (৩৪)। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি পাইপগান ও ৪০০ বোতল ফেনসিডিল।
নিহত লিটন উপজেলার পৈয়াপাথর এলাকার আবদুস ছামাদেও ছেলে, তার বিরুদ্ধে ৭টি মাদকের মামলা রয়েছে এবং বাতেন একই উপজেলার বাখরনগর গ্রামের সহিদ মিয়ার ছেলে, তার বিরুদ্ধে ৮টি মাদকের মামলা রয়েছে।
মুরাদনগর থানার ওসি একেএম মঞ্জুর আলম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধার করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে তিনিসহ পুলিশের একটি দল মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জুর এলাকায় গোমতী বাঁধের পাশে অবস্থান নেন। সেখানে মাদক ব্যবসায়ী কানা লিটন ও বাতেনসহ তাদের সহযোগীরা পৌঁছলে তাদের আটকের চেষ্টাকালে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষায় ৫৩ রাউন্ড শাটগানের গুলি চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ী লিটন ও বাতেন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।
তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে উভয়ের মৃত্যু হয়। ওই অভিযানের সময় থানার এসআই মোজাম্মেল, এএসআই রোকন ও এএসআই মাসুদুর রহমান আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন ওসি।
কুষ্টিয়া: জেলার দৌলতপুর উপজেলায় সোমবার দিনগত রাত পৌনে ৩টার দিকে উপজেলার শেয়ালা মাঠ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশের চার সদস্য আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন-দৌলতপুর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকার টাইটেল (৩৫) ও প্রাগপুর এলাকার মোকাদ্দেস (৩৬)।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, তিন রাউন্ড গুলি এবং গুলির খোসা ও ২৭০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।
কুষ্টিয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ছাব্বিরুল ইসলাম জানান, দৌলতপুর উপজেলার শেয়ালা মাঠ এলাকায় মাদক বিক্রেতারা মাদক কেনাবেচা করছেন, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ ও দৌলতপুর থানা পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক বিক্রেতা রা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দু’জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ময়মনসিংহ: জেলার ভালুকায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মিজান (৪৫) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১শ গ্রাম হেরোইন, তিনটি গুলির খোসা, ১টি রামদা ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার দিনগত রাত সোয়া ২টার দিকে উপজেলার পাড়াগাঁও চটনপাড়া সামাদ ফকির বাড়ি এলাকায় এ ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে।
নিহত মিজান উপজেলার দক্ষিণ কাঁচিনা এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে।
এ ঘটনায় ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শাহ আলম আহত হয়েছেন। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. আশিকুর রহমান জানান, মাদক বিক্রেতারা মাদক ভাগাভাগি করছেন, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্য ও ভালুকা মডেল থানা পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল নিক্ষেপসহ এলোপাথারি গুলি ছুড়ে। পরে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে। পরে পুলিশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মিজানকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ(মমেক) হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাদক বিক্রেতা মিজানের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও ডাকাতিসহ ৯টি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় মাদক বিক্রেতা রবিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ওসি আশিকুর।
ঠাকুরগাঁও: জেলার হরিপুর উপজেলার শীতলপুর এলাকায় মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হারুন (৪৫) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন।
নিহত হারুন হরিপুর উপজেলার শীতলপুর এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে।
হরিপুর থানার ওসি রুহুল কুদ্দুস বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হরিপুর উপজেলার শীতলপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ী ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে গুলি বিনিময়কালে হারুন নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হন। মাদক বিক্রেতার বিরুদ্ধে হরিপুর থানায় মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান ওসি রুহুল।
সাতক্ষীরা: জেলার কলারোয়া উপজেলায় মাদক ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে ‘গুলিবিনিময়ে’ ইয়াবা সম্রাট আনিছুর রহমান নিহত হয়েছেন।
সোমবার দিনগত রাত সোয়া ২টার দিকে উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের চিতলা গ্রামে এ ‘গুলিবিনিময়ে’র ঘটনা ঘটে।
নিহত আনিছুর উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের মৃত সুরত আলীর ছেলে।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, রাতে দুটি গ্রুপ চিতলা এলাকায় মাদক ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় ‘গুলিবিনিময়ে’র শব্দ শুনে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইয়াবা সম্রাট আনিছুরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, দুই রাউন্ড গুলি ও ৭০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আনিছুরের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে বলেও জানান ওসি বিপ্লব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: জেলার আখাউড়া উপজেলায় মাদক ও ডাকাতিসহ আট মামলার আসামি জনি মিয়ার (৩০) গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি কার্তুজ, ২টি ছোরা, ১টি চাপাতি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার দিনগত রাত ২টার দিকে পৌর শহরের খালাজোড়া এলাকা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত জনি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার খাইয়ার গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে।
এদিকে, পুলিশের দাবি ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগির বিরোধে সহযোগীদের গুলিতে জনি নিহত হয়েছেন।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন তরফদার জানান, রাতে ডাকাতির মালামাল ও মাদক ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে জনি ও তার সহযোগীদের মধ্যে ‘গোলাগুলি’র ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পৌঁছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জনির মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত জনির বিরুদ্ধে মাদক, ডাকাতি, ও চোরাচালানসহ আখাউড়া ও অন্যান্য থানায় ৮টি মামলা রয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি মোশারফ।