রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকা থেকে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে গ্রেফতার হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ব্রিগ্রেড কমান্ডার ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল র্যাম্প মডেল থেকে জেএমবির শীর্ষ কমান্ডার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ। তিনি আরও জানান, সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সংস্পর্শে বিভিন্ন জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরবর্তীতে সে জঙ্গি কমান্ডার হয়ে উঠে ।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় কারওয়ানবাজারস্থ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেএমবি নেতা জিব্রিল সম্পর্কে এসব তথ্য দেন তিনি। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে র্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে গ্রেফতার হয় জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের তৎকালীন আমির সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ও প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে র্যাব জেএমবির বদর স্কোয়াড ব্রিগেড ও ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি নামে দুটি ব্রিগেডের তথ্য পায়। কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, হলি আর্টিজানসহ অন্যান্য হামলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে বদর স্কোয়াড ব্রিগেড। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেশ কজন সদস্য গ্রেপ্তার ও নিহত হলে দুর্বল হয়ে পড়ে স্কোয়াডটি। এর ব্যাকআপ বা রিজার্ভ হিসেবে সক্রিয় হতে শুরু করে ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি।
র্যাব কর্মকর্তা মাসুদ আরও বলেন, সম্প্রতি বেশ কজন উগ্র ও জঙ্গি সদস্য গ্রেফতারের পর গোয়েন্দারা তথ্য পায় যে, ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল। মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিলের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার রাজাপুরে। বাবার নাম খোরশেদ আলম।
জেএমবিতে যোগদানের আগে র্যাম্প মডেলিং করতো জিব্রিল। রাজধানীর সোনারগাঁও, রেডিসনের মতো অভিজাত হোটেলগুলোতেও র্যাম্প মডেলিং করতেন তিনি। কর্নেল তুহিন মাসুদ বলেন, জেএমবিতে যোগ দেওয়ার পর তার কাজ ছিল কর্মী সংগ্রহ করা ও হিজরতে সহযোগীতা করা। সুন্দর চেহারা ও মটিভেশন ক্ষমতার কারণে দ্রুত ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনি কমান্ডারের পদ পান তিনি। জেএমবিতে তিনিই কর্মী সংগ্রহ করতেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আইটি এক্সপার্ট হিসেবে ঊর্ধ্বতন জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি সাংগঠনিক কাজগুলো অনলাইনে পরিচালনা করতেন জিব্রিল। তার বাসা থেকে এ রকম যোগাযোগের তথ্য ভান্ডার পাওয়া গেছে। গুলশান হলি আর্টিজান ও কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানার জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার।
ছবিঃ শামীম আহম্মেদ
জিজ্ঞাসাবাদে আবু জিব্রিল র্যাবকে জানায়, তিনি রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও ঢাকায় বেশ কজন জেএমবিতে যোগ দেয়া নতুন কর্মীদের বাইয়্যাত(শপথ) পাঠ করিয়েছেন। জেএমবির ব্রিগেড আদ্-দার-ই কুতনিতে আনসার(সাহায্যকারী). মুজাহির(যোদ্ধা), সালাফি আলেম বোর্ড এবং অর্থ প্রদানকারী বিভিন্ন ব্যক্তি রয়েছে বলে জানায়। বদর ব্রিগেড দুর্বল হওয়ার পর মূলতঃ আবু জিব্রিলের নের্তৃত্বেই জেএমবির ব্রিগেড আদ্-দার-ই কুতনি বিভিন্ন অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন ও যে কোনো স্থানে নাশকতা করার মতো পরিকল্পনা নেয়। আবু জিব্রিলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ।