গতকাল থেকে বাসযাত্রীদের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। এর এক দিন আগে যাত্রা শুরু করে ট্রেনযাত্রীরা। তবে ট্রেনযাত্রা মোটামুটি স্বস্তির হলেও নানা কারণে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না।
গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট কিছুটা কম থাকলেও অন্যান্য মহাসড়কে দুর্ভোগে পড়ে ঘরমুখো যাত্রীরা। বিশেষ করে প্রধান দুই ফেরিঘাটে ফেরিস্বল্পতা ও নদীর তীব্র স্রোতের কারণে পারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকায় গরু নিয়ে চরম বিপাকে পড়ে গরুর মালিক ও ব্যবসায়ীরা। পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেল, এবার ঈদের ছুটি শুরু হবে মূলত বৃহস্পতিবার থেকে। ফলে এখনও সেই অর্থে ঈদযাত্রা শুরু হয়নি। ছুটি কম হওয়ায় এক সঙ্গে অনেক বেশি মানুষ বাড়ির পথ ধরবে। এতে যানজট ও দুর্ভোগ বাড়তে পারে। এর সঙ্গে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে যেনতেনভাবে মেরামত করা মহাসড়কে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। সব মিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে না, এমন আশঙ্কা অনেকেরই। গতকাল সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে বেশিরভাগ বাসই সময়মতো না পৌঁছার কারণে ছেড়ে যেতে দেরি হয়েছে। এতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। দুপুরের দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে গেছে, যাত্রীদের ভিড় তুলনামূলক কম। ঈদের আগাম টিকেট বিক্রির সময় শেষ হলেও অনেকেই কাউন্টারে গিয়ে টিকেটের জন্য ভিড় করছে। শেষ সময়ে কপালগুণে কেউ কেউ টিকেট পাচ্ছেও। তবে বেশিরভাগই টিকেট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছিল।
ছবিঃ শামীম আহম্মেদ
স্টেশন ম্যানেজার জানান, গত রোববার ঢাকায় রেললাইনে সমস্যার কারণে গতকাল সুন্দরবন এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা এবং নীলসাগর এক্সপ্রেস আড়াই ঘণ্টা পর স্টেশন ছেড়ে গেছে। সকালের খবরের মানিকগঞ্জ ও গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, ফেরি সঙ্কট, নদীর তীব্র স্রোত ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে গত কয়েকদিনের অব্যাহত যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। যানজট ও দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে আটকা পড়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে কোরবানির গরুবাহী ট্রাকচালক, গরু ব্যবসায়ী ও সাধারণ যাত্রীরা। দীর্ঘ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে অনেক যাত্রী ৫-৭ কিলোমিটার হেঁটে ঘাটে পৌঁছে। ঈদের আগে এই রুটে ১৯টি ফেরি নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও গত শনিবার পর্যন্ত ছিল ১৪টি। রোববার দুটি এবং গতকাল একটি ফেরি যোগ করায় সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭টিতে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার ফেরির সংখ্যা বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হলেও সময়মতো ফেরি বাড়েনি। গতকাল বিকেল ৩টায় সরেজমিন দেখা গেছে, দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের গোয়ালন্দ পদ্মার মোড় এলাকা পর্যন্ত অন্তত ৬ কিলোমিটার জুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। সন্ধ্যা ৬টায় যানবাহনের সারি প্রায় ৮ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়।
এবার ঈদে ১৯টি ফেরি চালানো হবে জানিয়ে বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম বলেন, প্রতিকূলতায় ফেরিগুলোর ইঞ্জিনের ওপর চাপ পড়ে মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে পড়ছে। সেগুলোকে তাত্ক্ষণিক ভাসমান কারখানায় মেরামত করা হচ্ছে। এছাড়া পদ্মার পানি কমতে থাকায় দৌলতদিয়ার ঘাটগুলো নিচে নামাতে হচ্ছে। এতে ফেরি ভিড়তে সমস্যা হচ্ছে।
শিবচর (মাদারীপুর): ঈদে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে তীব্র স্রোতে পারাপারে বিড়ম্বনার সঙ্গে এই রুট হয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ৬ লেনে উন্নয়নের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে যাত্রীদের। পদ্মায় পানি কমা শুরু করায় রয়েছে নাব্যতা সঙ্কটের শঙ্কা। আর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের অনেক স্থানে জোড়াতালি দিয়ে চলছে সংস্কারকাজ। রয়েছে অবৈধ যানবাহনের ছড়াছড়িও। কয়েক দিন ধরে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। শিমুলিয়া থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার ভাটি ঘুরে ফেরিগুলো কাঁঠালবাড়ী ঘাটে আসায় প্রায় ৪০ মিনিট সময় বেশি লাগছে। উত্তাল পদ্মায় স্রোতের মধ্যে লঞ্চ ও স্পিডবোটে রয়েছে অতিরিক্ত বোঝাইয়ের ঝুঁকিও। নৌপথের ভোগান্তি পেরিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ঘাট হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার মহাসড়ক দুই লেন থেকে ছয় লেনের কাজ চলায় অনেক স্থান সরু হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে জরাজীর্ণ ও ভাঙাচোরার কারণে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গত কয়েক বছরের ঈদসহ সারাবছরই দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহালেও এবার কিছুটা স্বস্তি রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ী ইলিয়াছ আহম্মেদ চৌধুরী ঘাট ম্যানেজার জানান, ঈদে এবার ২০টি ফেরি চলাচল করবে। গরুবাহী ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। ঘরমুখো যাত্রী চাপ শুরু হলে ফেরিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী পরিবহন ও যাত্রী পারাপার করা হবে। নদীতে ড্রেজার প্রস্তুত রাখা রয়েছে। নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ড্রেজিং শুরু করা হবে।
কুমিল্লা:, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতু, টোলপ্লাজা সংলগ্ন ওয়েট স্কেল থেকে শহীদনগর পর্যন্ত চার-পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় সকালের দিকে কিছুটা যানজট থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে থাকে। সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের দাউদকান্দি টোলপ্লাজা থেকে ময়নামতি সেনানিবাস পর্যন্ত প্রায় ৪২ কিলোমিটার অংশে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
টাঙ্গাইল:ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের কারণে গাড়ির গতি খুবই ধীর। তবে গতকাল সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোথাও কোনো যানজট সৃষ্টি হয়নি। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম জানান, মহাসড়কে যানজট নিরসনে মঙ্গলবার (আজ) থেকে সাড়ে সাতশ’ পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া বিকল বা দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলো দ্রুত সরিয়ে নিতে সার্বক্ষণিক রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কালিয়াকৈর: ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, সফিপুর, মৌচাক, কোনাবাড়ী এলাকার বিভিন্ন স্থানে গতকাল বিকেল পর্যন্ত যানজট তুলনামূলক কম ছিল। মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ভাঙাচোরা, এলোমেলো যানবাহন চলাচল, অবৈধ অটোরিকশা ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের কারণে গত শনি ও রোববার রাত পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়। তবে গতকাল দৃশ্যপট অনেকটাই পাল্টে যায়।