বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
সরকার বা বিরোধী দল কারও ফাঁদেই পা দেব না-প্রধান বিচারপতি
প্রকাশ: ১০:৩৮ am ১১-০৮-২০১৭ হালনাগাদ: ১০:৪১ am ১১-০৮-২০১৭
 
 
 


উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা বলেছেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের গঠনমূলক সমালোচনা হতে পারে। তবে এই রায় নিয়ে আমরা সরকার বা বিরোধী দল কারও ফাঁদেই পা দেব না।’ গতকাল সকালে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা এ মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে কোনো ধরনের রাজনীতি না করার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল সকাল ৯টায় আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হলে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কিছু প্রতিবেদন তুলে ধরে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানান। জয়নুল আবেদীন বলেন, রায় ও বিচারকদের নিয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান যে মন্তব্য করেছেন, তা গুরুতর আদালত অবমাননাকর। এ সময় সমিতির সম্পাদক এএম মাহবুবউদ্দিন খোকন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সিনিয়র কৌঁসুলি খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাইরায় চৌধুরী, এজে মোহাম্মদ আলী, কায়সার কামাল, রাগীব রউফ চৌধুরীসহ বিএনপিপন্থী একাধিক কৌঁসুলি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে উপস্থিত ছিলেন। তখন রাষ্ট্রের প্রধান কৌঁসুলি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজউদ্দিন ফকির, মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু, অমিত তালুকদার, খোন্দকার দিলীরুজ্জামানসহ একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিম। বিএনপি সমর্থক কৌঁসুলিদের দাবির মুখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা বলেন, ঠিক আছে। আপনারা সিনিয়র আইনজীবী। আপনারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য বলতেই পারেন। সঙ্গে সঙ্গে আপনারা পরস্পর সংযত আচরণও করুন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না। আপিল বিভাগের সাতজন বিচারক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ রায় দিয়েছেন। এই রায় নিয়ে যেকোনো গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাব। কিন্তু গঠনমূলক সমালোচনা না হলে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ সময় জয়নুল আবেদীন বলেন, সর্বোচ্চ বিচারালয়কে নিয়ে যেভাবে বলা হয়েছে, তা আদালত অবমাননাকর। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান দায়িত্বশীল পদে আছেন, সেই চেয়ারম্যান এভাবে কথা বলতে পারেন না। আমরা বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার কথা বলছি। প্রধান বিচারপতি বলেন, এই বিচার বিভাগকে রক্ষা করতে হলে কোনো রাজনীতি আনবেন না। আমরা রায় দিয়ে দিয়েছি। বিচার বিভাগ কোনো রিজয়েন্ডারও দেবে না। জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে বলছি-আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের বিষয়টি দেখবেন।’ আইনজীবী শ.ম. রেজাউল করিম বলেন, সমিতির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো রেজল্যুশন আনা হয়নি। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে রাজনীতি অনভিপ্রেত। বিএনপি মাঠে রাজনীতি করতে পারছে না, এ কারণে এ রায় নিয়ে তারা মাঠ গরম করতে চাচ্ছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সচেতন, আমরা দেখছি। সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন আইন কমিশনের বক্তব্যকে আদালত অবমাননাকর উল্লেখ করে আদালত অবমাননার রুল ইস্যুর আর্জি জানান। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা অনুরোধ করব, আপনারা সংযত আচরণ করবেন, যা সবার জন্য মঙ্গল। সরকার বা বিরোধী দল, কারও ট্র্যাপে পড়ব না। আমরা সচেতন। সাতজন বিচারপতি চিন্তা-ভাবনা করে রায় দিয়েছি। রায় নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সর্বোচ্চ আদালতকে নিয়ে কুত্সা রটানো হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের এ পর্যায়ে আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা সংযত আচরণ করবেন, যাতে কেউ ফায়দা লুটতে না পারে। আপনারা আরও সচেতন হবেন। এরপর জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। তখন প্রধান বিচারপতিও বলেন, উই কনসার্ন। মওদুদ আহমদ বলেন, আইন কমিশনের ওই বক্তব্য অবমাননাকর। প্রধান বিচারপতি বলেন, রায়ের গঠনমূলক সমালোচনা যে-কেউ করতে পারেন। এক দিন ইতিহাস তার বিচার করবে।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT