রাজধানীর বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি শাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তাঁরা এই জবানবন্দি দেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মিরাশ উদ্দিন বলেন, বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের মামলায় সাফাত ও সাকিফ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
আদালত সূত্র বলছে, ঢাকার মহানগর হাকিম আহসান হাবিব আসামি শাফাত আহমেদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আর সাদমান সাকিফের জবানবন্দি রেকর্ড করেন মহানগর হাকিম ছাব্বির ইয়াসির আহসান চৌধুরী।
এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে শাফাত ও সাকিফকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। মামলার প্রধান আসামি শাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে ১১ মে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত সোমবার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন মামলার চার ও পাঁচ নম্বর আসামি শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত আলী। গতকাল বুধবার গ্রেপ্তার হন আবদুল হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ।
গত ২৮ মার্চ রাজধানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে ৬ মে বনানী থানায় মামলা হয়। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে দুই ছাত্রী জানান, ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে তাঁদের নেওয়া হয়। সেখানে ধর্ষণের শিকার হন তাঁরা।
এর আগে রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার দুই ছাত্রী আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে দুই ছাত্রী জানান, গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে তাঁদের নেওয়া হয়। শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী তাঁদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের দ্য রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান। হোটেলে যাওয়ার আগে দুজনই জানতেন না সেখানে পার্টি হবে। এ সময় তাঁদের সঙ্গে শাহরিয়ার নামের এক বন্ধু ছিলেন। তাঁদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। হোটেলে যাওয়ার পর শাফাত ও নাঈমের সঙ্গে তাঁরা আরও দুই তরুণীকে দেখেন। পরিবেশ ভালো না লাগায় শাহরিয়ারসহ দুই তরুণী চলে আসতে চেয়েছিলেন।
তখন আসামিরা শাহরিয়ারের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নেন এবং তাঁকে মারধর করেন। এরপর দুই তরুণীকে অস্ত্রের মুখে একটি কক্ষে নিয়ে যান। ধর্ষণ করার সময় শাফাত গাড়িচালককে ভিডিও চিত্র ধারণ করতে বলেন। আর নাঈম তাঁদের মারধর করেন। তাঁরা এ ঘটনা জানিয়ে দেবেন বলে জানানোর পর শাফাত তাঁর দেহরক্ষীকে ওই দুই তরুণীর বাসায় তথ্য সংগ্রহের জন্য পাঠান। লোকলজ্জার ভয় এবং মানসিকভাবে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন আসামিরা। তাঁদের কথামতো না চললে বা এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।