গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী ও ঢাকায় বুধবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকালের মধ্যে এসব দুর্ঘটনার খবর দিয়েছেন জেলা প্রতিনিধিরা।
গোপালগঞ্জে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ৬
গোপালগঞ্জে মাইক্রোবাস ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পরিবারের পাঁচজন ও এক চালকের মৃত্যু হয়েছে; আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন।
কাশিয়ানী থানার ওসি এ কে এম আলীনূর হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কাশিয়ানী উপজেলার গেড়াখোলায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন - বাগেরহাটের হালিম আকন (৪০), তার স্ত্রী আসমা বেগম (৩৫), ছেলে সুজন (১৭) ও শিহাব (৮), শ্যালক বাদশা ফরাজি (৩৭) ও অজ্ঞাতপরিচয় চালক।
সৌদি আরব প্রবাসী হালিম দেশে ফেরার সময় ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে তাকে আনতে গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
হালিম বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালি ইউনিয়নের খুড়িয়াখালি গ্রামের বাসিন্দা।
ওসি হোসেন বলেন, সেবা গ্রিনলাইনের একটি বাস গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে মাইক্রোবাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ছয়জনের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় আহত অন্তত ১০ জনকে মকছেদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ আশপাশের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, মাইক্রোবাসটি বাসের নিচে চাপা পড়েছে। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনার পরপরই উদ্ধারকাজ শুরু করে।
দুর্ঘটনার কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ।
হালিমের বড় ভাই মতিয়ার রহমান বলেন, “আমার ভাই হালিম দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব থাকত। ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসছিল।
“তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও শ্যালক তাকে বিমানবন্দরে আনতে গিয়েছিল। সেখান থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে তারা বাড়ি ফিরছিল।”
সাউথখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “এক পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এমন ঘটনায় শোক প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই।”
সিরাজগঞ্জে বাস-মাইক্রো সংঘর্ষে নিহত ৪
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়।
বুধবার রাত ২টার দিকে হাটিকুমরুল-বগুড়া মহাসড়কের রয়হাটি এলাকায় এ দুর্ঘটনায় আরও দুইজন আহত হন বলে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানি জানান।
নিহতরা হলেন - বগুড়ার কাহালু উপজেলার দামগাড়া গ্রামের বাসিন্দা মালয়েশিয়া প্রবাসী হারুনুর রশিদের বাবা সোলায়মান হোসেন (৬৫), হারুনের স্ত্রী লিলি আক্তার (৩৫), ছেলে সাগর (১২) ও মাইক্রোবাসের চালক পাবনা বেড়ার আক্কাস আলীর ছেলে আব্দুল খালেক (৩২)।
হারুনের আরেক ছেলে সবুজ (১৮) ও ভাগ্নে মনসুর রহমান এ দুর্ঘটনায় আহত হন।
ওসি কাদের জানান, হারুন ছুটিতে মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসায় পরিবারের সদস্যরা তাকে আনতে বগুড়া থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন।
রাত ২টার দিকে তাদের মাইক্রোবাস রায়গঞ্জ উপজেলার রয়হাটিতে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও তিনজন। তাদের সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মাইক্রোবাসের চালকেরও মৃত্যু হয় বলে জানান ওসি।
পাবনায় বাসের ধাক্কায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
পাবনার ঈশ্বরদীতে বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে পাবনা-রাজশাহী মহাসড়কের মুলাডুলি শেখপাড়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দরিনাজিরপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে মোহা. শিপন (২২) ও পাশের গ্রাম আরজতপাড়ার হাবিবুর রহমানের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৪)।
ঈশ্বরদী থানার ওসি আব্দুল হাই জানান, দুই বন্ধু মোটরসাইকেলে ঈশ্বরদীর পাকশী যাচ্ছিলেন। পথে মুলাডুলি শেখপাড়ায় বিপরীতমুখী একটি বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাসটিকে আটক করা যায়নি বলে জানান ওসি।
হাঁটতে বেরিয়ে মাইক্রোর ধাক্কায় টাঙ্গাইলে নিহত ২ নারী
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে সকালে হাঁটতে বেরিয়ে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে; এ দুর্ঘটনায় আহত হন আরও এক নারী।
ধনবাড়ীর নিজবর্ণী এলাকার টাঙ্গাইল-জামালপুর মহাসড়কে সকাল ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে ধনবাড়ী থানার ওসি মজিবর রহমান জানান।
নিহতরা হলেন - নিজবর্ণী এলাকার বাবুল বকলের স্ত্রী রেবা বেগম (৩২) ও বেলুটিয়া এলাকার মজিদের স্ত্রী সাহাতন (৫০)।
আর আহত ওবায়দা বেগমকে (৪০) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি একই উপজেলার বউলা এলাকার আব্দুল্লাহ আল মামুন জুয়েলের স্ত্রী।
ওসি মজিবর বলেন, “সকালে তিন নারী টাঙ্গাইল-জামালপুর মহাসড়কে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলেন। এ সময় নিজবর্ণী এলাকায় জামালপুরাগামী একটি মাইক্রোবাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে মাইক্রোবাসটি ফুটপাতে উঠে পড়ে। মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই এক নারীর মৃত্যু হয়।”
পরে আহত অবস্থায় বাকি দুইজনকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানে আরেকজনকে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন বলে জানান তিনি।
পুঠিয়ায় ট্রাকচাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় ট্রাকচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন - রাজশাহী নগরীর রামচন্দ্রপুর এলাকার আবদুল লতিফের ছেলে তুষার (৩০) ও নাজমুলের ছেলে শাহীন (৩৫)।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে বানেশ্বর ইউনিয়নের পোল্লাপুকুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান হাইওয়ে পুলিশের শিবপুরহাট ফাঁড়ির সার্জেন্ট মনিরুজ্জামান।
তিনি বলেন, তুষার ও শাহীন একটি মোটরসাইকেলে করে বানেশ্বর থেকে রাজশাহীর দিকে যাচ্ছিলেন।
“ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পোল্লাপুকুর এলাকায় একটি ট্রাক পেছন থেকে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তুষার ও শাহীনের মৃত্যু হয়।”
পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করলেও চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
ঢাকায় অটোরিকশা চালক নিহত
ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষে একজন নিহত ও চারজন আহত হন।
নিহত জামাল হোসেন (৪০) ওই অটোরিকশার চালক ছিলেন।
আহত মুফতী হাবিব উল্লাহ (৪৫), মো. জাহাঙ্গীর (৩০), মো. জামাল (৪২) ও উসমান (৩৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঢাকা মেডিকেল ফাঁড়ি পুলিশের এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে কচুক্ষেত থেকে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিল অটোরিকশাটি। পথে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের সামনে একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে চালক ও চার যাত্রী আহত হন।
ট্রাফিক পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জামালকে মৃত ঘোষণা করেন।
আহত জাহাঙ্গীরের ভগ্নিপতি সুলতান জানান, মুফতি হাবিব উল্লাহ কচুক্ষেত আল-আমিন মসজিদের ইমাম। তার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে যাচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর। আর জামাল ও উসমান মাছ বিক্রেতা।