অপারেশনের মাধ্যমে ক্লিনিকে প্রসব করানোর সময় নবজাতকের মাথার একটা অংশ কেটে ফেললেন চিকিৎসক। কেটে ফেলা স্থানে চারটি সেলাই করা হলেও স্বজনদের জানানো হয়নি বিষয়টি।
জন্মের পর থেকেই কাটা স্থানে তুলা ও তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। জন্মের ৭ ঘণ্টা পর শিশুটির মৃত্যু হয়। দাফনের জন্য গোসল করাতে গেলে মাথার ক্ষত ও সেলাইয়ের চিহ্ন দেখতে পান স্বজনরা।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিরটেক একতা ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষুব্ধ স্বজনরা নবজাতকের মরদেহ নিয়ে সোমবার দুপুরে ক্লিনিক ঘেরাও করে। পরে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের ভাড়ারিয়া গ্রামের মিশুক রানার স্ত্রী মাকসুদার প্রসব বেদনা উঠলে রোববার রাত ১০টার দিকে তাকে একতা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
রাত ১২টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশন করে একটি কন্যাশিশু প্রসব করানো হয়। অপারেশনের সময় নবজাতকের মাথার একটা অংশ কাটা পড়ে। ভোর রাতে শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেয়ার পথে সকাল ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
মাকসুদার পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রসব করানোর পরে শিশুটির মাথায় তুলা এবং তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। তারপরও তুলা ভেদ করে রক্ত বের হচ্ছিল। সকাল ১০টার দিকে দাফন করার জন্য গোসল করানোর সময় তুলা সরালে তারা দেখতে পান শিশুটির মাথায় গভীর ক্ষত। সেখানে সেলাই করা হয়েছে। এ অবস্থা দেখে তারা বুঝতে পারেন নবজাতকের মাথার একটা অংশ কেটে ফেলেছেন চিকিৎসক। ফলে অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় তারা শিশুটির মরদেহ নিয়ে ক্লিনিকে আসেন।
শিশুটির বাবা মিশুক রানা বলেন, প্রসব করানোর সময় তার মেয়ের মাথায় আঘাতের কথা তাদের কাছে ডাক্তার, নার্স কেউ বলেননি। আঘাত লুকিয়ে রাখার জন্য তুলা এবং তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। তিনি অভিযোগ করেন, ডাক্তারের অবহেলার কারণেই তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
এ ব্যাপারে ক্লিনিকের পরিচালক মো. ফারুক হোসেন জানান, ডা. মো. নাজমুল হাসান এ সিজারিয়ান অপারেশন করেছেন। অপারেশনের জন্য তাকে কল দিয়ে ঢাকা থেকে আনা হয়েছিল। সিজিরিয়ান অপারেশনের কথা স্বীকার করে ডা. মো. নাজমুল হাসান বলেন, আমি বর্তমানে ডিজি হেলথে ডেপুটেশনে কর্মরত। ঠান্ডাজনিত কারণে শিশুটির অবস্থা ভালো ছিল না। সে কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। মাথায় আঘাতের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘মাথার একটা অংশ কাটা যায়। সেটি সেলাই করা হয়েছে। তবে এর কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।’
মানিকগঞ্জ সদর থানা হতে জানা যায়, নবজাতকের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।