সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান পদের মেয়াদ সর্বোচ্চ চার বছর নির্ধারণ করে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের প্রধানদের (নিয়োগ, বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা) আইন-২০১৭’-এর খসড়ায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, সংবিধানে বলা আছে, বাহিনী প্রধানদের নিয়োগ ও বেতন-ভাতা আইন দিয়ে নির্ধারিত হবে। এতদিন জয়েন্ট সার্ভিসেস ইন্সট্রাকশনস (জেএসআই) নামে একটি সার্কুলার দিয়ে এটা চলত। যেহেতু সংবিধানের বাধ্যবাধকতা আছে, সেহেতু আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। বর্তমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী বাহিনীপ্রধানরা মাসে ৮৬ হাজার টাকা মূল বেতনের সঙ্গে অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন। মূল বেতনের এই পরিমাণ মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বেতনের সমান। বাহিনী প্রধানরা বিশেষ আবাসিক সুবিধা, আবাসিক সংশ্লিষ্ট সুবিধা, সার্বক্ষণিক গাড়ি, সামরিক হাসপাতালে বিনা খরচে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের চিকিত্সা, রেশন, ভবিষ্যত্ তহবিল ও সহায়ক জনবল সুবিধার পাশাপাশি এককালীন আউটফিট ভাতা, ভ্রমণ ভাতা, উত্সব ভাতা, নববর্ষ ভাতা ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পান। জয়েন্ট সার্ভিসেস ইন্সট্রাকশনসে বাহিনী প্রধানদের পদে চাকরির সময় নির্ধারণ ছিল না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন আইনে বলা হয়েছে, চার বছরের জন্য উনারা (বাহিনীপ্রধান) নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেবেন। মন্ত্রিসভা গত বছর ডিসেম্বরে এ আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার পর শফিউল আলম জানিয়েছিলেন, সরকারি চাকরির অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর এক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। কোনো বাহিনীর প্রধান ৫৯ বছর বয়স পার হওয়ার পরও চার বছরের পুরো মেয়াদ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, যদি সরকার তাকে অবসরে না পাঠায়। চাকরির বয়স থাকুক আর না-ই থাকুক, যোগ দেওয়ার পর মেয়াদ চার বছর থাকবে। চাকরি থাকলে মাইনাস ধরে নেন, সব মিলিয়ে চার বছর। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছিলেন, চাকরি এক বছর থাকা অবস্থায় কেউ কোনো বাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ পেলে তিনি সরকারের ইচ্ছায় আরও তিন বছর সময় পেতে পারেন। যেমন ধরুন, জেনারেল হিসেবে অবসরে যাওয়ার কথা ৫৯ বছরে, ওই সময় তিনি সেনাবাহিনী প্রধান হলেন। তখন থেকেই উনার (চাকরির মেয়াদ) চার বছর যুক্ত হবে। খসড়ায় নীতিগত অনুমোদনের সময় জানানো হয়েছিল, বাহিনী প্রধানরা পদ থেকে অবসর নেওয়ার দিন থেকেই তিনি অবসরপ্রাপ্ত বলে গণ্য হবেন। বেসামরিক কর্মকর্তাদের মতো এক বছরের অবসরোত্তর ছুটিও (পিআরএল) পাবেন। কোনো বাহিনী প্রধান অবসর নেওয়ার পর কোনো সামরিক বা অসামরিক পদে পুনঃনিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। তবে চুক্তিভিত্তিতে কোনো অসামরিক পদে নিয়োগ পেতে পারেন। অবসরপ্রাপ্ত তিন বাহিনী প্রধানরা প্রজাতন্ত্রের কোনো কাজে সামরিক বা বেসামরিক নিয়োগের অযোগ্য বিবেচিত হলেও সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা থাকবে না।