এক বছর আগে যে স্থানে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২২ জন, গুলশানের সেই ভবনে ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হল তাদের।
বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী ওই ঘটনায় নিহতদের স্মরণ অনুষ্ঠানের জন্য শনিবার কিছু সময়ের জন্য খোলা রাখা হয় ভবনটি; এর মধ্যে বিভিন্ন দূতাবাস ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয় শ্রদ্ধামঞ্চে।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে ও দেশটির আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মিকিও হাতাদেয়া ওই ভবনে গিয়ে ফুল দিয়ে স্মরণ করেন নিহতদের।
সকাল ১১টার দিকে ফুল দিতে যান ঢাকায় ইতালি দূতাবাসে কর্মকর্তারা।
জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে ১৭ জন ছিলেন বিদেশি; তার মধ্যে নয়জন ছিলেন ইতালির, সাতজন ছিলেন জাপানি। নিহত জাপানিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছিলেন।
সকাল ১১টার আগে শ্রদ্ধা মঞ্চে ফুল দেওয়া হয় বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত আইজি মোখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে।
সেদিন হামলা ঠেকাতে গিয়ে এখানে নিহত হয়েছিলেন পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও পরিদর্শক সালাউদ্দিন।
সকাল ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হলি আর্টিজানে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শ্রদ্ধা জানানো শেষে মন্ত্রী কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “জঙ্গিবাদ পুরোপুরিভাবে নির্মূল হয়নি, দুর্বল হয়েছে। শুধু ফোর্সের (আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) উপর নির্ভর করলে চলবে না। দেশপ্রেমিক জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে।
জঙ্গিবাদের যারা পৃষ্ঠপোষক, তাদের মোকাবেলায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই চালানোর কথাও বলেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করে কাদের বলেন, “ফ্রান্স ও লন্ডনের মতো দেশে পুলিশ যা পারেনি, আমাদের দেশের পুলিশ তা করে দেখাতে পেরেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। তারা অসম সাহসিকতার সঙ্গে উগ্র জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করছে। বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।“
সকাল ১১টার পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধামঞ্চে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়।
ফুল দেওয়ার পর একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সাংবাদিকদের বলেন, “যারা এই জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত তাদের দর্শন কোনো সাধারণ দর্শন নয়। তারা মওদুদীবাদ-ওহাবীবাদের সমর্থক। সেই দর্শনকে তারা ধারণ করে।
“আমরা গতবারও দাবি করেছি, এখনও করছি, ধর্মের নামে মানুষ হত্যা চলছে, তা বন্ধ করতে হলে অবিলম্বে জামাত-হেফাজতের মতো শক্তিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
সকালে সাংবাদিকদের হলি আর্টিজানের ফটকের সামনে যেতে দেওয়া না হলেও পরে সেখানে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে ডিএমপির উপকমিশনার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “বিদেশিদের অনুরোধ ছিল, তাদের ছবি তোলা যাবে না।”