আজ ২১ আগস্ট। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার বিভীষিকাময় একটি দিন। বীভত্স নারকীয় এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। আরেকটি রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট ঘটাতে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি ১৩টি গ্রেনেড ছুড়েছিল ঘাতকরা। গ্রেনেডের আঘাতে পরাস্ত করতে না পেরে ওইদিন শেখ হাসিনার গাড়িতে গুলিও ছুড়েছিল। সে সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট। সভ্য জগতে অকল্পনীয় মানুষ হত্যার এ উত্সব সেদিন সংঘটিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায়। সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আয়োজিত সেই জনসভায় খুনিচক্রের মূল টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দলীয় নেতা ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীরা মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করেছিলেন শেখ হাসিনাকে। একেবারে পরিকল্পিত ও টার্গেট করা ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গুলি ভেদ করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাচ। শেখ হাসিনাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ। পরিকল্পিত হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে শেখ হাসিনা ফিরে এলেও ওইদিন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এই ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলার পর সেদিন স্প্লিন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন শত শত মানুষ। প্রাণ দেন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন দলীয় নেতাকর্মী।
গ্রেনেডের হিংস্র দানবীয় সন্ত্রাসে আক্রান্ত হয় মানবতা। জীবন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ এ দিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। বঙ্গবন্ধু হত্যার ঊনত্রিশ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে আবারও ঘাতকের দল এই আগস্টেই জোট বেঁধেছিল। শোকাবহ রক্তাক্ত আগস্ট মাসেই আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর টার্গেট থেকে ঘাতক হায়েনার দল গ্রেনেড দিয়ে রক্তস্রোতের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশস্থলে। টার্গেট ছিল এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নেতৃত্বশূন্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতেই ঘাতকরা চালায় এই দানবীয় হত্যাযজ্ঞ। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেক কুশীলব এই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কোন ভবনে বসে কারা এই হামলার নীলনকশা তৈরি করেছিল তাও স্পষ্ট হয়েছে। জাতির প্রত্যাশা, ২১ আগস্টের হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও তাদের মদদদাতাদের সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চির অবসান করে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করা। তত্কালীন বিএনপি-জামায়াত জোটের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হীন চেষ্টা, হামলাকারীদের আড়াল করার লক্ষ্যে তদন্তের নামে নানা রকম টালবাহানায় এই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়। বিচার পাওয়ার আশা হয়ে ওঠে সুদূরপরাহত। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনঃতদন্তে বেরিয়ে আসে বিএনপি-জামায়াত জোটের ঘৃণ্য মুখোশ। তত্কালীন হাওয়া ভবনে বসেই তারেক রহমানসহ বিএনপি-জামায়াতের মন্ত্রী-নেতারা যে এই ঘৃণ্য ও বীভত্স হামলার পরিকল্পনা করে তা আজ স্পষ্ট। কিন্তু হামলার ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও খুনিদের বিচার না হওয়ায় কিছুটা হলেও ক্ষুব্ধ ও হতাশ ওই ভয়াল হামলায় নিহতদের পরিবার ও জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে থাকা আহত নেতাকর্মীরা। ভয়াল সেই হামলায় মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে বেঁচে গেলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হারিয়েছেন তার দুই কানের স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি। আহত পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী দেহে স্প্লিন্টার নিয়ে, হাত-পা-চোখ হারিয়ে জীবন্মৃত অবস্থায় অভিশপ্ত জীবন কাটাচ্ছেন। অসংখ্য নেতাকর্মীকে চিরদিনের জন্য বরণ করতে হয়েছে পঙ্গুত্ব, অন্ধত্ব। এই ভয়াল গ্রেনেড হামলার ১৩তম বার্ষিকীতে নিহতদের পরিবার ও আহতরা দ্রুত এই কাপুরুষোচিত হামলার নায়ক ও নেপথ্যের মদদদাতাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অভিন্ন কণ্ঠে দাবি উঠেছে-ঘাতকদের ফাঁসি চাই। ২১ আগস্ট স্মরণে এই দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে খামারবাড়ী কৃষিবিদ মিলনায়তনে। আওয়ামী লীগসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে হামলাস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বনানী কবরস্থানে আইভী রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাবেন।