নোট বাতিলের জেরে ভারতের অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে রোববার নির্ধারিত ৫০ হাজার বিয়ের অনুষ্ঠান স্থগিত হয়েছে।
বিয়ের জন্য ব্যাংক থেকে রুপি উত্তোলনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করা নিয়ে জটিলতায় পড়েছে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। কাগজপত্র জমা দিতে না পারলে রুপি উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনেকে অভিযোগ করেছেন, সবকিছু দেওয়ার পরও ব্যাংক বলছে, তাদের কাছে এত রুপি নেই।
কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশনা দিয়েছে, বিয়ের খরচ নির্বাহের জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার রুপি দেওয়া যাবে। কিন্তু তার জন্য কোন কোন খাতে কত রুপি কাদের মাধ্যমে ব্যয় করা হবে, তার নথিপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
বিয়ের জন্য আরেকটি বাধা এ-সংক্রান্ত ব্যবসায়ীদের ব্যাংক লেনদেন নিয়ে জটিলতা। ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি দিতে হচ্ছে, তারা নগদ অর্থ গ্রহণ করবেন, অনলাইন লেনদেন করতে পারবেন না। ফলে বিয়ের কেনাকাটার বাজার স্থবির হয়ে পড়েছে।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, নগদ অর্থ উত্তোলনে ‘শিথিলতার’ নামে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। বিয়ের জন্য অর্থ উত্তোলনে ভূরি ভূরি নথিপত্র জমা দেওয়ার তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মধ্যপুরের বাসিন্দা ভি চন্দ্রিকা অভিযোগ করেছেন, নগদ অর্থের অভাবে রোববার নির্ধারিত তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন।
ভি চন্দ্রিকা বলেন, ‘বাড়ি বিক্রির অর্থ আমি ব্যাংকে জমা রাখি। কিন্তু এখন আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ের জন্য সে অর্থ তুলতে পারছি না।’
ব্যাংকগুলো দাবি করছে, ‘আমরা শুধু নিশ্চিত হচ্ছি, অর্থ তুলে তা বিয়েতে খরচ করা হবে। আমরা রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার নির্দেশনা অনুসরণ করছি মাত্র। আমরা সর্বোচ্চ ব্যাংকের বাইরে যেতে পারি না।’
হিন্দু বিয়ের প্রথা অনুযায়ী, রোববার ছিল বিয়ের জন্য সব দিক থেকে শুভ দিন। জ্যোতিষীরা বলছেন, এরপর এমন শুভ তারিখ আসবে আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি।
এদিকে, ব্যাংকের লেনদেন স্বাভাবিক হতে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত লেগে যাবে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এর মধ্যে ব্যাংক লেনদেন স্বাভাবিক না হলে পরের শুভ তারিখেও তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারবেন না।
হায়দরাবাদে রোববার ২০ হাজার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তবে অধিকাংশ বিয়েই স্থগিত করা হয়েছে।
কালো রুপি জব্দ ও অর্থ পাচার রোধ করার জন্য গত মাসে হঠাৎ করে ৫০০ ও ১০০০ হাজার রুপির নোট বাতিল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। চালু করা হয় নতুন ২০০০ রুপির নোট। নোট বাতিলের পর ব্যাংক থেকে রুপি তোলার ওপর নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। পুরোনো নোট ভাঙিয়ে নতুন নোট নিতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তা ছাড়া, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়ে হঠাৎ এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ায় গ্রাহকদের সেবা দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
নোট বাতিলে স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে দায়ী করে রাজনীতি গরম হয়ে ওঠে। কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। তবে মোদির সরকার আশ্বাস দিয়েছে, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।