অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে অবশেষে দেশ ছাড়লেন করলেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ ৪৪৭ ফ্লাইটে করে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন তিনি।
এর আগে, রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে সময় হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবন থেকে সস্ত্রীক বের হন প্রধান বিচারপতি। রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ভিআইপি গেট দিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন তারা। তবে বিমানবন্দর থেকে প্রধান বিচারপতির প্রটোকলের গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে থাকা সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘প্রধান বিচারপতির স্ত্রী সুষমা সিনহা তার সঙ্গে রওনা হননি।’ সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তা ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এক কর্মকর্তাও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ ৪৪৭ ফ্লাইটটিতে রয়েছে এয়ারবাস এ৩৩৩ মডেলের উড়োজাহাজ। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় শনিবার ভোর ৬টা ৫ মিনিটে সিঙ্গাপুরের চাংগি বিমানবন্দরে অবতরণ করবে ফ্লাইটটি। সেখানে থেকে অন্য একটি ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করবেন প্রধান বিচারপতি।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে তার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি চিঠি দিয়ে অবহিত করেন। ওই চিঠিতে আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে চান বলে উল্লেখ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান বিচারপতির বিদেশ যাওয়া সংক্রান্ত সরকারি আদেশ (জিও) জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকের সই করা ওই আদেশে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির আবেদনে এর আগে ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু বিচারপতি আরও বেশি দিন বিদেশে থাকবেন। তাই রাষ্ট্রপতি নতুন আদেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২৫ দিনের অবকাশ শেষে ৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট খোলার দিনই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ১ নভেম্বর পর্যন্ত এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনার ঝড় ওঠে। এর আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় এবং বিচারিক আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি সংক্রান্ত গেজেট নিয়ে সরকারের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির মতপার্থক্য দেখা দেয়। এর জের ধরেই প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটিতে পাঠানোর অভিযোগ তোলেন বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদসহ আইনজীবী সমিতির একাংশ। তবে সরকার ও আওয়ামী লীগ এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। প্রধান বিচারপতি বা আদালতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যেই প্রধান বিচারপতি সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পাঁচ বছরের ভিসার জন্য দূতাবাসে আবেদন করেন। তাদের তিন বছরের ভিসা দেয় অস্ট্রেলিয়া দূতাবাস। দেশটিতে বর্তমানে তাদের বড় মেয়ে সূচনা সিনহা অবস্থান করছেন। ভিসা পাওয়ার পর মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে তার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি চিঠি দিয়ে অবহিত করেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই পরে বৃহস্পতিবার জিও জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এস কে সিনহার অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি।