রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামনি মারা গেছে। বুধবার (২৩ মে) সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার কামারবাসা গ্রামের নিজ বাড়িতে সে মারা যায়। মুক্তামনির বাবা ইব্রাহীম হোসেন একথা জানিয়েছেন।
মুক্তামনির শারীরিক অবস্থা সম্প্রতি বেশ খারাপ হয়ে পড়েছিল। ডান হাতটি আরও ফুলে গিয়েছিল। তাকে নিয়ে চিন্তায় ছিল পরিবার। কয়েকদিন থেকেই জ্বরেও ভুগছিল সে। মঙ্গলবার রাত থেকে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের অর্থো সার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. হাফিজ উল্লাহ বলেন, ‘মুক্তামনির জেনারেল কন্ডিশন খুবই খারাপ। রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে। তার হাতের যে টিউমার অপারেশন করা হয়েছিল, সেটা আবার বড় আকার ধারণ করেছে। টিউমারে দুই/তিনটি ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন ওর শরীরে অনেক জ্বর ছিল। সকাল থেকে খাওয়া-ধাওয়া করেনি। জ্বরের জন্য ওষুধ দিয়েছি। ওর যে অবস্থা সাতক্ষীরাতে সেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না। সেজন্য ঢাকায় পাঠাতে পরামর্শ দিয়েছি।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে একমাসের জন্য গত বছর ডিসেম্বরে বাড়িতে এসেছিল মুক্তামনি। এরপর ছয় মাস অতিবাহিত হলেও সে আর ঢাকায় যেতে চায়নি।
গত বছরের ১২ জুলাই রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামনিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। প্রথমে তার রোগটিকে বিরল রোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে বায়োপসি করে জানা যায়, তার রক্তনালীতে টিউমার হয়েছে। তখন তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা। মুক্তামনির সব রিপোর্ট দেখে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ঢামেকের চিকিৎসকরাই তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। এর পর মুক্তামনির হাতে ৫ আগস্ট প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। প্রথমে তার হাতের ফোলা অংশে অস্ত্রোপচার করে তা ফেলে দেন চিকিৎসকরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়। ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল মুক্তামনির স্কিন গ্রাফটিং (চামড়া লাগানো) অপারেশনে অংশ নেন। পরে মুক্তামনির হাত আবার ফুলে যাওয়ায়, ফোলা কমানোর জন্য হাতে প্রেসার ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়।