মিজানুর রহমান লাবু পরিচালিত ‘তুখোড়’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে গত শুক্রবার। ছবিতে দেশের নবাগত নায়ক শিবলীর বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভারতের অভিনেত্রী রাতাশ্রী দত্ত। তিনি ঊড়িষার ‘বাজি বাজি বাবাজি’ চলচ্চিত্র ও কলকাতার ‘থালিগার্ল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। দুটো ছবিই মুক্তির অপেক্ষায় আছে। তাঁর অভিনীত ছবি প্রথম বাংলাদেশ থেকেই মুক্তি পেল গত শুক্রবার। চলচ্চিত্রে অভিনয় ও ক্যারিয়ার ভাবনা নিয়ে রাতাশ্রী কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
যদিও আমি ‘বাজি বাজি বাবাজি’ ছবির শুটিং আগে করেছি, কিন্তু ‘তুখোড়’ ছবিটিই আগে মুক্তি পেল। খুব ভালো লাগছে। আমি শুক্রবারে সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটি দেখেছিও। যদিও কিছু সিনেমা হলের পর্দায় একটু সমস্যা ছিল তবুও দর্শকরা অনেক আনন্দ নিয়ে ছবিটি দেখেছেন। আমিও উপভোগ করেছি। আমি আরো কিছুদিন এ দেশে আছি। ইচ্ছে আছে, ছবিটি হলে গিয়ে একদিন একা একা দেখব। ছবির কোনো কলাকুশলীকে সঙ্গে রাখব না।
কলকাতার একটা দুটো ছবির প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু সবকিছু ব্যাটে-বলে মেলেনি। ঊড়িষার ছবির গল্পটা চমৎকার। আর বাংলাদেশেও ভালো একটা কাজের প্রস্তাব পেলাম। তাই এটা হাতছাড়া করতে চাইনি। কলকাতার একজন কাস্টিং ডিরেক্টর আমাকে ‘তুখোড়’ ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে এই ছবির টিমের আগে থেকেই পরিচয় ছিল।
ছবির একটি দৃশ্যে আমি অনেক মাদকাসক্ত ছিলাম। আমাকে সে অবস্থায় পুলিশ অফিসার আটক করে। তখন আমি অনেক উল্টাপাল্টা বকতে থাকি। পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা বাপ্পারাজ ভাই। তাঁকে সামনে দেখে যতটা না আমি ভয় পেয়েছি ঠিক ততখানি তিনি আমাকে সাহায্য করেছিলেন। বাপ্পারাজ ভাইকে আমি টিচারও বলতে পারি। উনার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। এই দৃশ্যটি আমাকে মেকআপ ছাড়া করতে হয়েছে। অভিনয় অনেক ন্যাচারাল লেগেছে। তাই এটি ভালো লেগেছে। এ ছাড়া ছবিতে আমার বাবা-মার অশান্তির পর আমার কিছু সংলাপ থাকে। সেই দৃশ্যটাও আমার ভালো লেগেছে।
আমি বাংলাদেশের প্রচুর সিনেমা দেখছি। বিটিভিতে প্রতি শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশের সিনেমা মার সঙ্গে আমি দেখতাম। তখন কলকাতায় বাংলাদেশের কিছু চ্যানেল দেখা যেত। বাংলাদেশের অভিনেত্রী দিতি ও ববিতাকে আমার ভীষণ ভালো লাগত। তাঁদের আমি অনুসরণ করতাম। তাঁরা কীভাবে টিপ পরত সেটাও আমি খেয়াল করতাম। নায়ক সালমান শাহকেও আমি পছন্দ করতাম। এ ছাড়া টিভি অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতেরও আমি ভক্ত ছিলাম। তাঁর অভিনীত নাটক আমি অনেক দেখেছি। আসলে বাংলাদেশের খুলনায় আমার মার আর যশোরে আমার বাবার বাড়ি। ছোটবেলা থেকে মার চোখে আমি বাংলাদেশ দেখেছি। তখন থেকে বাংলাদেশ ঘোরার ইচ্ছে আমার খুব ছিল।
শুটিং করতে এসে শুধু শুটিংয়ের লোকেশনগুলোই দেখা হয়েছে। সিলেটের শ্রীমঙ্গল অনেক ভালো লেগেছে। এ ছাড়া পদ্মা নদী দেখতে আমি একদিন রাত আড়াইটায় গিয়েছিলাম। শুটিং ছিল না কিন্তু আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল পদ্মার কালো জল আমি দেখব। সে ইচ্ছে আমি পূরণ করেছি। ভোর না হওয়া পর্যন্ত পদ্মার পাড়ে আমি ছিলাম। বাংলাদেশের ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খানকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ বইটা পড়ার পর থেকে আমার পদ্মার পাড় দেখতে ইচ্ছে হয়েছিল। এ ছাড়া আমি ছোটবেলা থেকে জীবনানন্দ দাশ ও জসীমউদদীনের কবিতা পড়ে বড় হয়েছি। জসীমউদদীনের ‘নকশী কাঁথার মাঠে’র সাজু চরিত্রে আমি অভিনয় করতে চাই । রুপাই ও সাজুর প্রেমকাহিনী চমৎকার। সাজু চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলে আমি ভীষণ খুশি হব। আমি মনে মনে এই চরিত্র অনেক কল্পনা করি। আমার কল্পনা শক্তি অনেক ভালো। এরপর বাংলাদেশে এলে জীবনানন্দ দাশ ও জসীমউদদীনের বাড়ি ঘুরে আসতে চাই।
ছবিটির নব্বই ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আমি এখানে থালিগার্ল চরিত্রে অভিনয় করছি। এখানে একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে আমি চাকরি করি। যেখানে অতিথিদের থালিভর্তি ফুল দিয়ে অ্যাপ্যায়ন করতে হয়। ছবিটিতে আমার নায়ক সমদর্শী দত্ত। বাংলাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে ছবির বাকি দৃশ্যগুলোর শুটিং করার কথা রয়েছে।
আমি নায়িকা কিংবা স্টার হতে চাই না। অভিনেত্রী হতে চাই। নামের আগে অভিনয়শিল্পী রাতাশ্রী হিসেবে পরিচিতি পেতে চাই। মানুষের ভালোবাসা অর্জন ও আজীবন শিল্পচর্চা করতে চাই। মানুষকে বিনোদন দেওয়ার মাঝে আলাদা আনন্দ আছে। অভিনয় করব তবে সেটা ভালো গল্পের চলচ্চিত্রে। আমি ক্ল্যাসিক্যাল নাচ শিখেছি। এছাড়া গান কবিতা আবৃত্তি সবই আমি শিখেছি। ভবিষ্যতে একটা স্কুল খুলতে চাই যেখানে গান ও নাচ শেখানোর পাশাপাশি শিল্পের অনেক কিছু শেখানো হবে। বলতে পারেন, এটা আমার স্বপ্ন।