বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
ধূমপান বর্জন করুন, ক্যানসারকে দূরে রাখুন
প্রকাশ: ০৫:২০ pm ১৮-০২-২০১৭ হালনাগাদ: ০৫:২৫ pm ১৮-০২-২০১৭
 
 
 


ধূমপান হচ্ছে তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে শ্বাসের সাথে তার ধোয়া শরীরে গ্রহণের প্রক্রিয়া। সাধারণ যেকোনো দ্রব্যের পোড়ানো ধোঁয়া শ্বাসের সাথে প্রবেশ করলে তাকে ধূমপান বলা গেলেও মূলত তামাকজাতীয় দ্রব্যাদির পোড়া ধোঁয়া গ্রহণকেই ধূমপান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিকগণসহ মোটামুটি সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত যে, ধূমপান যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সার সহ নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণ এবং ধারক ও বাহক।  যুব সম্প্রদায়ের কাছে  সিগারেট বেশ জনপ্রিয় এবং এটার প্রতি তাদের এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়৷সিগারেট আসক্তি থেকে বের হয়ে আসাটাও বেশ কঠিন৷ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর৷

 

ধূমপান আসক্তি কীভাবে হয়?

তামাক গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কে ডোপামিন ক্ষরণ হয়। ডোপামিন এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার, যেটি আমেজ বা আরামদায়ক অনুভূতি আনে। মস্তিষ্ক ওই আরামদায়ক অনুভূতি উপভোগ করে। যার ফলে কোনও ব্যক্তি আবার তামাকের স্বাদ নিতে চায়। ক্রমশ ট্রান্সমিটারগুলির সংবেদনশীলতা কমতে থাকে। মস্তিষ্কের সেই আমেজ পূরণ করার জন্য আরও বেশি করে তামাকের দরকার পড়ে।

যখন কোনও ব্যক্তি নিকোটিন গ্রহণ করে, তখন এই রাসায়নিক ব্রেনের মাধ্যমে তার ত্বক, মুখ, নাকের মিউক্যাল আস্তরণ এবং লাংস অবধি পৌঁছে যায়। ধুমপানের দ্বারা নিকোটিন শরীরে প্রবেশ করে তাৎক্ষণিক শক্তিতে দোলা দিয়ে মাদকতা এনে দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে এই কম্পন কমতে থাকে এবং শরীরে অবসন্নতা বোধ হয় বা ক্লান্তি আসে। ক্রিয়াটি ধুমপান সংক্রান্ত উইথড্র্য়াল সিম্পটমের একটি লক্ষণ, যে কারণে শরীর পরবর্তী ডোজটি নিতে চায়।

গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, শিশু ও কিশোররা তামাকের আসক্তি বিষয়ে বেশ অসুরক্ষিত। কোনও ব্যক্তি কম বয়সে তামাক নিতে শুরু করলে তার পক্ষে এতে আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

তামাক আসক্তি থেকে মস্তিষ্কে যে ধরনের পরিবর্তন ঘটে, সেগুলির সঙ্গে কোকেন বা হেরোইন নেওয়ার কারণে ঘটা পরিবর্তনের সামঞ্জস্য রয়েছে। দীর্ঘদিন তামাক ব্যবহারের ফলে আসক্ত ব্যক্তির মধ্যে কিছু নিদির্ষ্ট অবস্থা বা লক্ষণ প্রকাশ পায়, যে জন্য সে ধূমপান বা অন্যান্য ধরনের তামাকজাত নেশা করতে চায়। দিনের কিছু বিশেষ সময়ে, যেমন ঘুম ভাঙার পর, কাজের ফাঁকে, কফি বা লাঞ্চ ব্রেকের পর আসক্ত ব্যক্তির তামাক ব্যবহারের ইচ্ছা জাগে। গাড়ি চালানো, মদ্যপান বা অন্যান্য চাপযুক্ত কাজ করার উৎসাহে অনেকেই ধূমপানের টান অনুভব করে। 

ধূমপায়ীদের নিকোটিন নির্ভরতা বা আসক্তি চিহ্নিতকরণের কয়েকটি লক্ষণ-

  • ধূমপান ক্ষতিকর জেনে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেও অসফল হওয়া।
  • যখন শুরু হয়েছিল, তখনকার তুলনায় প্রতিদিন অনেক বেশি সিগারেট টানা।
  • কয়েকমাস আগে  যতগুলো দরকার হত, তার থেকে বেশি সিগারেট এখন প্রতিদিন লাগছে।
  • দিনের শেষে দেখা যাচ্ছে, চাহিদার থেকেও বেশি সিগারেট টানা হয়েছে। সিগারেটে সুখটান না দিলে মন আনচান করে।
  • ধূমপান বন্ধ করলে উইথড্রয়াল সিম্পটম হয়, ফলে দৈনন্দিন জীবনে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
  • কিছুক্ষন ধূমপান না করলেই মনে হয় কখন এবং কোথায় গিয়ে পরবর্তী সিগারেট টানা যাবে।
  • নিজের জন্য কর্মপদ্ধতির পরিকল্পনা ও স্থান এমনভাবে নির্দিষ্ট করা, যাতে রেস্টুরেন্ট বা যে কোনও জায়গায় ধূমপানের সুবিধা রয়েছে এবং আশপাশে সিগারেট কেনার ব্যবস্থা আছে, অর্থাৎ ধূমপানের ব্যাঘাত না ঘটে।
  • যে সমস্ত জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ, সেই জায়গাগুলি এড়িয়ে যাবার ইচ্ছে থাকা।
  • অসুস্থ বা স্বাভাবিকভাবে কাজ করার অবস্থায় না থাকলেও ধূমপান চালিয়ে যাওয়া।
  • উপরের কয়েকটি লক্ষণ থেকেই বোঝা যাবে যে, ওই ব্যক্তি সিগারেট আসক্ত এবং তার সহায়তা প্রয়োজন।

ধূমপান বিষপানঃ

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সে কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা৷ তবে ধূমপান স্বাস্থ্যের ঠিক কতটা ক্ষতি করে, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই৷ জার্মানির ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ধূমপান করার কারণেই বছরে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়৷ আর বছরে ৩,৩০০ জন মারা যায় ধূপায়ীদের কাছাকাছি থেকে সিগারেটের ধোঁয়া গ্রহণ করার কারণে৷

ফুসফুসের ক্যানসারঃ

ধূমপান শরীরের যে কোনো অঙ্গেরই ক্ষতি করে, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফুসফুস এবং হার্ট বা হৃদযন্ত্রের৷ ফুসফুসের ক্যানসার রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই ধূমপায়ী৷

একদিনে দুই কোটিরও বেশি সিগারেটঃ

জার্মানিতে মানুষ দিনে প্রায় আড়াই কোটি সিগারেট খায়৷ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২৫ জন নিয়মিত ধূমপান করেন, মাঝে মাঝে করেন শতকরা চারজন৷ তার মধ্যে শতকরা ৩৫ জন পুরুষ এবং ২২ জন নারী৷ জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি ধূমপান করেন কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ ক্ষেত্রের শ্রমিক, বাস বা ট্রাক চালক৷ আর সবচেয়ে কম ধূপায়ীদের মধ্যে রয়েছেন ডাক্তার, ফার্মেসি কর্মী এবং শিক্ষক৷

মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বাড়ছেঃ

গত ২০ থেকে ৩০ বছরে বিশ্বে মহিলাদের মধ্যে ধূমপান করার প্রবণতা অনেক বেড়েছে৷ বিশ্বে মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের চেয়ে বেশি৷ তবে এখন মহিলারা যেভাবে ধূমপান করেন, তা অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষদের সমান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷

সিগারেটের বিজ্ঞাপন অনেকটা দায়ীঃ

কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপান উপভোগ করার চেয়ে স্মার্টনেস দেখানোই যেন বড় কথা৷ তবে সিগারেটের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনই এদের ধূমপান করতে প্রভাবিত করে থাকে৷ সুখের কথা, জার্মানিতে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে৷

         

ঘরের বাইরে ধূমপানঃ

বেশ কয়েক বছর থেকে জার্মানিতে বিভিন্ন জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বা অফিস-আদালতের মতো ডয়চে ভেলেতেও অফিস ঘরে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ৷ তবে ঘরের বাইরে, অর্থাৎ বারান্দায় প্রায়ই কর্মীদের ধূমপান করতে দেখা যায়, এমনকি বাইরের তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি হলেও৷

শেষ কথা

মানুষ তার আয়ু নিজেই নির্ধারণ করতে পারেনা তা ঠিক, তবে ধূমপান করে ইচ্ছে করে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবারও কোনো যুক্তি নেই৷ শুধু তাই নয়, যারা ধূপায়ীদের আশেপাশে থাকে তারা আক্রান্ত হয় স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যায়৷ আর সন্তানসম্ভবা মায়েরা ধূমপানের সময় ভাবুন তাদের অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের কথা৷ এমনটাই বলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷

 

 

লেখাঃ আকবর রাব্বী

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT