মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতা এবং সচেতনতার অভাবেই বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণ
প্রকাশ: ১০:৫১ am ২১-১২-২০১৭ হালনাগাদ: ১০:৫৫ am ২১-১২-২০১৭
 
 
 


এস এম জামাল, কুষ্টিয়া : বাংলাদেশের আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা আছে ১৮ বছর৷ এর কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে হলে সেটি হবে ‘বাল্যবিবাহ', যা একটি দন্ডনীয় অপরাধ৷ কিন্তু আইনের বিধিনিষেধ কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে এটি বন্ধ হচ্ছে না৷ বুধবার সকালে কুষ্টিয়া ব্র্যাকের আঞ্চলিক কার্যালয়ে বাল্য বিবাহের কারণ ও প্রতিকার বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য উঠে আসে। ব্র্যাকের ফোকাস গ্র“প ডিসকার্সন ২০১৭ পার্টনারশীপ ষ্ট্রেনদেনিং ইউনিট এ মতবিনিময়ের আয়োজন করে। মতবিনিময় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন ব্র্যাকের জেলা প্রতিনিধি মোতাহার হোসেন, ব্র্যাকের স্টাফ আইনজীবি নিয়ামুল বাশির মুস্তাফির। মতবিনিময়কালে এ্যাড. কামরুন্নাহার ময়না বলেন, ‘‘বাল্যবিবাহের এক নম্বর কারণ দারিদ্র্য৷ আর দুই নম্বর কারণ হচ্ছে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব৷''। ‘‘শুধু যে দরিদ্র বা অল্প শিক্ষিত পরিবারে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে, তা নয়৷ এমনকি শহরে অনেক শিক্ষিত পরিবারেও বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে৷ অনেক সময় দেখা যায়, বিদেশে পড়ালেখা করে এমন ছেলে পেলে মেয়ের বয়স বিবেচনা না করেই তাকে বিয়ে দিয়ে দেয় অভিভাবকেরা৷'' দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতা অনেক সামাজিক সমস্যার কারণ শুধু এগুলোই নয়৷ অল্প বয়সে বিয়ে দেবার পেছনে মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতাকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবেও মনে করেন তিনি৷ সাংবাদিক অর্পন মাহমুদের মতে, বাংলাদেশে নারীর জন্য নিরাপত্তাহীনতা একটি বড় সমস্যা৷ তাই, কোনো রকম ঝামেলা থেকে বাঁচতে মেয়েদেরকে অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেয় বাবা-মায়েরা৷ খাজানগর এলাকায় হাজারো চাতাল শ্রমিকরা বহুবিবাহের কারনে তাদের সন্তানদের নিয়ে বাল্যবিয়ে দিয়ে থাকেন। মতবিনিময়ে আরেক সাংবাদিক এসএম জামাল বলেন ,‘‘বিয়েটা হলো একটা মেয়ের সামাজিক টিকিট৷ কারণ অবিবাহিত মেয়ের কোনো রকম অঘটন ঘটলে তার বিয়ে হওয়া নিয়ে বিরাট ঝামেলা হয়৷'' তাই অভিভাবকরা ভালো পাত্রের লোভে অথবা ইভটিজিং রোধে বাল্য বিয়ে দিয়ে থাকেন।
তিনি আরও মনে করেন, দেশে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন থাকলেও, আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাবা-মায়েরা অনেক সময় কাজিদেরকে মেয়ের বয়স বাড়িয়ে বলেন৷ ফলে, প্রকৃত ১৮ বছর না হলেও কাগজে বাড়িয়ে লেখা হয় কনের বয়স৷ ব্র্যাক কর্মী মমতাজ বেগম বলেন, কৈশোরে একটি মেয়ের যখন স্কুলে যাবার বয়স, তখনই তাকে বসতে হচ্ছে বিয়ের পিঁড়িতে৷ নিজের জীবনকে চিনতে না চিনতেই, স্বপ্নগুলো সাজাতে না সাজাতেই বউ সেজে সে যাচ্ছে শ্বশুর বাড়ি৷ শারীরিক ও মানসিকভাবে উপযুক্ত হবার আগেই বাল্যবিবাহ মেয়েটির কাঁধে সংসারের যে ভার চাপায় তা বহনে সে কতোটা সক্ষম? এ প্রশ্নের উত্তরে সমাজসেবা অফিসের রেজিষ্ট্রেশন কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ‘‘অল্প বয়সে বিয়ে হবার কারণে অনেক সময় দাম্পত্য জীবনে ভাঙন দেখা যায়৷ তাছাড়া শারীরিকভাবে উপযুক্ত হবার আগেই সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মত্যুর ঝুঁকির মধ্যেও পড়ে তারা৷ অর্থাৎ সব মিলিয়ে একটি মেয়ের উপরে পরে বাল্যবিবাহের নেতিবাচক চক্রের প্রভাব৷'' বাল্যবিবাহের ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হলে, একই সঙ্গে গণমাধ্যমে প্রচার কার্য, জনমত গঠন, শিক্ষার প্রসার এবং আইন প্রয়োগের ব্যাপারে সরকারকে কিছু বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বছরে অন্তত এক থেকে দেড় হাজার যুবকরা প্রশিক্ষণ গ্রহন করে। তাদেরকে আমরা সচেতনতা করে তুলি। এছাড়া বাল্যবিয়ে বন্ধের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভুমিকা বেশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT