যমজ সন্তানের একটিকে পেটে রেখে অস্ত্রোপচার শেষ করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মজিবুর রহমান, লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অপারেশনকারী ডাক্তার শেখ হোসনে আরা বেগম হাইকোর্টে হাজির হয়েছেন। তাঁরা তিনজনই আইনজীবীর মাধ্যমে এ ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছেন।
আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও এ কে এম জহিরুল হকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ২৯ অক্টোবর চিকিৎসক শেখ হোসনে আরা বেগমসহ তিনজনকে তলব করেন হাইকোর্ট। আজ তাঁদের আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
সেদিন বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন। এ বিষয়ে তিনি জানান, কুমিল্লার গৌরীপুরের একটি ক্লিনিকে টিউমার ভেবে প্রসূতির পেটে সন্তান রেখেই অস্ত্রোপচার শেষ করার ঘটনায় কুমিল্লার সিভিল সার্জন, অভিযুক্ত হাসপাতাল লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক এবং হোসনে আরা বেগমকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আউয়াল হোসেনের স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে (২২) গত ১৮ সেপ্টেম্বর দাউদকান্দির গৌরীপুর লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অস্ত্রোপচার করা হয়। সেখানে খাদিজার পেটে একটি সন্তান রেখেই অস্ত্রোপচার শেষ করার অভিযোগ ওঠে ডা. শেখ হোসনে আরার বিরুদ্ধে। গর্ভে মৃত সন্তান বহন করেন খাদিজা বেগম। এক মাস পর গত ২৬ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে অস্ত্রোপচার করে ওই শিশু অপসারণ করা হয়।
আলট্রাসনোগ্রাফিতে যমজ সন্তানের কথা উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরের ‘লাইফ হসপিটাল’-এর চিকিৎসক হোসনে আরা বেগম গত ১৮ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচারের সময় একটি সন্তান গর্ভে রেখেই সেলাই করে দেন। অন্য সন্তানকে টিউমার বলে জানিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। এতে গর্ভেই মারা যায় অনাগত সন্তান। তবে অস্ত্রোপচারে বের করা কন্যাসন্তান আদিবা ইসলামের বয়স এখন এক মাস। সে সুস্থ আছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা বলেন, ‘আমরা মৃত বাচ্চাটিকে জরায়ুর বাইরে পেয়েছি। সাধারণত যে সিজারিয়ানের মাধ্যমে প্রসব ঘটানো হয়, তেমন অপারেশনের মাধ্যমে এ বাচ্চাটি বের করার মতো ছিল না। এটা খুবই জটিল একটি কাজ।’
বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, ‘সব চিকিৎসকের পক্ষে নিরাপদে এমন জটিল ডেলিভারি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ ক্ষেত্রে আলাদা দক্ষতার দরকার হয়। শুরুতেই যদি ঢাকায় নিয়ে আসা হতো, তবে হয়তো বিষয়টি এমন নাও হতে পারত।’
গত ১৮ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যমজ অন্য সন্তান বের করার সময় জরায়ুর বাইরে থাকা এই শিশুটি জীবিত ছিল কি না—এ প্রশ্নে ডা. নিলুফার সুলতানা বলেন, ‘এত দিন পরে তা বোঝা সম্ভব নয়।’ অস্ত্রোপচারের পর প্রসূতি খাদিজার অবস্থা এখন কিছুটা ভালো বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তবে পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জানা যায়, গৌরীপুরের ‘লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি’র কোনো সরকারি অনুমোদন ছিল না। এক বছর ধরে অনুমোদন ছাড়াই এটি চালানো হচ্ছিল। কয়েকজন চিকিৎসক খণ্ডকালীন ওই হাসপাতালে কাজ করতেন।