আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারত সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা সফররত দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
চলতি মাসের ১৮ তারিখ ভারতে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু পূর্বঘোষিত সফরটি স্থগিত করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) জানায় একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে এম জে আকবরের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধ্বে ভারত সফরের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। দু’দেশের কর্মকর্তারা একসঙ্গে বসে বিষয়টি ঠিক করবেন।
ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেলে এটি হবে মোদি সরকারের সময় শেখ হাসিনার প্রথম সফর।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনা ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মন্তব্য করে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুই নেতার কার্যকরী পদক্ষেপ দুই দেশের সর্ম্পককে আরও বিস্তৃত করেছে।
দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এগুলোর কারণে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতায় প্রভাব ফেলা উচিত নয়।
এ সময় এমজে আকবর বলেন, সুসর্ম্পক থাকলে যে কোনো সমস্যা সমাধান সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
হলি আর্টিজানের মতো বিভিন্ন ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনা ছিলো দেশের উন্নয়ন ব্যহত করা এবং দেশে অস্থিতিশীল করার জন্য।
মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সংঘাতময় পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে আকবর বলেন, কোনো সভ্য সমাজ সন্ত্রাসের সঙ্গে আপস করতে পারে না।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অবদানের কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতার পর ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ফিরে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি একটি ইতিহাস তৈরি হয়েছে। বিশ্বে কোনো মিত্র শক্তি এভাবে ফিরে যায়নি।
বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে পানি বণ্টন, সংরক্ষণ ও পানি নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হয়।
হাইড্রো ইলেকট্রিসিটি এবং জ্বালানি খাতে দু’দেশের ব্যাপক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ভারতীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও ভিশনারী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন আকবর।
আঞ্চলিক রাজনীতিতে শেখ হাসিনার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র প্রধানমন্ত্রীর ১৮ ডিসেম্বরের সফর স্থগিত হওয়ার খবর জানানোর পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তাও বাংলানিউজকেও বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের দিনক্ষণে কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। দু’দেশের সুবিধাজনক সময়ে সফরটি অনুষ্ঠিত হবে।” সফরটি আগামী দু’এক মাসের মধ্যে হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
ইহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও এম জে আকবরের সাক্ষাৎকালে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাঙ্গেরি সফরের সময় তার ফ্লাইটে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণের বিষয়টিও উঠে আসে সাক্ষাতে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এম জে আকবর।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, মূখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ভারতীয় হাই কমিশনার হর্শ বর্ধন শ্রিংলা।