এতদিন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), সেটা পেয়ে গেল তারা। আর সেটা তাদের পক্ষেই। এখন থেকে বিসিবির ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিসিবির সংশোধিত গঠনতন্ত্র অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আপিল নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। যে রায়ে বিসিবিকে আরও স্বাধীনতা দিলেন আদালত। আর এই রায়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় বিসিবি সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রায় নিয়ে এখন কিছু বলা কঠিন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এখনও হাতে পৌঁছায়নি। যতটুকু শুনেছি, তাতে মনে করি, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অত্যন্ত ভালো রায় হয়েছে। আমরা যে গঠনতন্ত্রে এসেছি, এ ব্যাপারে কারও কোনো হস্তক্ষেপ নেই। এটি সম্পূর্ণ বৈধ। বাড়তি হচ্ছে, যদি গঠনতন্ত্রে কোনো পরিবর্তন আনতে হয়, ইজিএম-এজিএম ডেকে আমরাই তা করতে পারব। এখানে বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। সবচেয়ে বড় কথা হল, যে মামলাটা হয়েছিল, সেটা খারিজ। এটা একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এতে ক্রিকেটের ভালো হবে। এই রায়ের মাধ্যমে বিসিবিকে আরও স্বাধীনতা দিয়েছেন আদালত। ৩০ জুলাই বোর্ডসভায় ঠিক করা হবে বিসিবির বার্ষিক সাধারণ সভার ভেন্যু ও তারিখ। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেলে আমরা বিশেষ সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেব।’ ২০১২ সালের নভেম্বরে গঠনতন্ত্রের সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন বিসিবির সাবেক পরিচালক মোবাশ্বের হোসেন এবং বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি ইউসুফ জামিল বাবু। রিট আবেদনে বলা হয়, বিসিবির বিশেষ সাধারণ সভায় কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে গঠনতন্ত্র পাঠানো হয়েছিল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ গঠনতন্ত্র যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করে বিসিবিতে ফেরত পাঠায়। ফের বিসিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে সাধারণ সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এনএসসি। বিষয়টি নিয়ে রিট করা হয়। এ রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর আদালত রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি বিসিবির সংশোধিত গঠনতন্ত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এর পরদিন ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের এ রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ও বিসিবি। ওইদিনই বিসিবির সংশোধিত গঠনতন্ত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। পরে বিভিন্ন সময় এ স্থগিতাদেশ বাড়ানো হয়। সেটিরই ধারাবাহিকতায় পরে সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আদালত নির্বাচন করার পক্ষে মত দিলেও তা ছিল শর্তসাপেক্ষ। নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের বৈধতা নির্ভর করবে চূড়ান্ত রায়ের ওপর, এটাই বলেছিলেন আদালত। এতদিন বিসিবি ছিল এই রায়েরই অপেক্ষায়। সুপ্রিমকোর্ট আদেশ দিয়েছেন, এখন থেকে বিসিবির গঠনতন্ত্র বিসিবিই সংশোধন করতে পারবে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহ্ার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চ জানান, গঠনতন্ত্র সংশোধন করার সময় ক্রিকেট যাতে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সেদিকে বিসিবিকে নজর রাখতে হবে। এজিএমের মাধ্যমে বিসিবি আধুনিক ও যুগোপযোগী গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে পারবে। আদালতে বিসিবির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।