মাগুরার দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে চোখজুড়ানো হলুদ সরিষাখেত। কিছুদিন পরে মাঠ থেকে ওই সরিষা তুলবেন চাষিরা।
সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন হলুদের ঢেউ। সরিষাখেতে ফুল আসায় এমন চোখ জুড়ানো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ভালো ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অনুকূল আবহাওয়া আর যথাযথ পরিচর্যার কারণে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাঘ মাসের শেষ দিকে ও ফাল্গুনের শুরুতে খেত থেকে সরিষা তোলা শুরু হবে। তেলবীজ সরিষা বাজারে এখনো না এলেও বিক্রি হচ্ছে সরিষার শাক। বাজারে এই শাকের চাহিদা থাকায় বীজের পাশাপাশি শাক বিক্রি করেও ভালো আয় করেন কৃষক। তা ছাড়া উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চাষিরা দিন দিন সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
চলতি রবি মৌসুমে জেলার চারটি উপজেলায় ৯ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ২০ হেক্টর, মহম্মদপুরে ৫০০ হেক্টর, শালিখায় ৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর ও শ্রীপুর উপজেলায় ৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি দেড় মেট্রিক টন হিসেবে এক হাজার ৪৩২ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পার্থ প্রতীম সাহা জানান, এ অঞ্চলের মাটি সরিষা চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন আবাদ বাড়ছে। গত বছর কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে নয় হাজার হেক্টর জমিতে ১ হাজার মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদিত হয়। প্রতিকেজি সরিষা ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করেছেন তারা। প্রতি চার থেকে পাঁচ কেজি সরিষা থেকে এক কেজি তেল পাওয়া যায়। এ বছর সরিষার উৎপাদন আরো বাড়বে।
শালিখা উপজেলা সদরের আড়পাড়া বাজারের একটি তেল কল রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আইয়ুব আলী বলেন, সরিষার মৌসুমে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তার কারখানার যন্ত্রচালিত ঘানিতে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত সরিষার তেল উৎপাদন করা হয়। এই তেল ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন তিনি।
সদর উপজেলার বাটিকডাঙ্গি এলাকার কৃষক আকরাম আলী বলেন, ‘আমি গতবার ৫০ শতক জমিতে সরিষার চাষ করেছিলাম। খরচ হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। সরিষা বিক্রি করে পেয়েছি ৩৫ হাজার টাকা। এবারও একই পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ফলন দেখে মনে হচ্ছে, গতবারের চেয়ে এবার উৎপাদন আরো বেশি হবে। সে কারণে বেশি লাভেরও আশা করছি।’
মালঞ্চ গ্রামের আশরাফ উদ্দিন জানান, তিনি ১৫ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। কেবল সরিষার শাক বিক্রি করে ৫ হাজার টাকার বেশি আয় হয়েছে তার। সরিষা বিক্রি করে আরো ১০ হাজার টাকার মতো আয় হবে বলে জানান তিনি।