রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অপমানজনক কার্টুন এঁকেছেন। এই অভিযোগে ভারতের তামিলনাডুতে একজন কার্টুনিস্টকে গ্রেপ্তার করার চব্বিশ ঘন্টা পর তিনি সোমবার (৬ নভেম্বর) জামিন পেয়েছেন। জি বালা নামে ওই কার্টুনিস্টের মুক্তির দাবিতে সারা দেশ জুড়ে সাংবাদিকরা প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। যদিও তামিলনাডু সরকার এখনও বলছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার একটা সীমা থাকে এবং ওই ব্যক্তি তা লঙ্ঘন করেছিলেন। ভারতে সাম্প্রতিককালে রাজনীতিবিদ বা নেতা-মন্ত্রীদের নিয়ে ক্যারিকেচার করার জেরে অনেককেই এর আগে আটক হতে হয়েছে। তামিলনাডুর এই ঘটনা তাতে সর্বশেষ সংযোজন। চেন্নাইয়ের প্রেস ক্লাবের সামনে জি বালার সতীর্থ সাংবাদিকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তার মুক্তির দাবিতে। রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে তিরুনেলভেলির পুলিশ এসে চেন্নাইয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় ওই ফ্রিল্যান্স কার্টুনিস্টকে। তার অপরাধ, তিনি নিজের ফেসবুক পেজে এমন একটি কার্টুন পোস্ট করেছিলেন, যাতে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ই কে পালানিস্বামী, নেল্লাই জেলার পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসক নগ্ন শরীরে একতাড়া নোট দিয়ে কেবল নিজেদের গোপনাঙ্গটুকু ঢাকছেন আর তাদের সামনে আগুনে জ্বলছে একটি শিশু। দিনকয়েক আগে জেলা প্রশাসনের দফতরে সুদখোরদের অত্যাচারে জর্জরিত এক পরিবার যেভাবে নিজেদের শরীরে আগুন দিয়েছিল, সেই ঘটনার সূত্র ধরেই তিনি এঁকেছিলেন ওই কার্টুন। দিল্লিতে ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাবের সভাপতি এস ভেঙ্কটনারায়ণ বলছিলেন, "রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও আমলারা যেভাবে বালাকে গ্রেফতার করেছেন আমি তার তীব্র নিন্দা জানাই। এদের সমালোচনা করার সম্পূর্ণ অধিকার ওই কার্টুনিস্টের আছে, কারণ একটি দুর্দশাগ্রস্ত তামিল পরিবার যখন তাদের কাছে বারবার সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিল এবং শেষে অসহায়ভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল - তখন তারা কিচ্ছু করেননি। রাজনীতিবিদ ও আমলাদের চামড়া যদি এতই পাতলা হয় যে তারা নিজেদের ব্যর্থতার কোনও সমালোচনাও সহ্য করতে পারবেন না তাহলে তাদের তো এই পেশায় আসাই উচিত নয়।" ভারতের সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো আরও মনে করিয়ে দিচ্ছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বা মহারাষ্ট্রেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মহারাষ্ট্রে দেশদ্রোহের মামলা হয়েছিল কার্টুনিস্ট অসীম ত্রিবেদীর বিরুদ্ধে, আর পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্র ফেসবুকে শেয়ার করে হাজতবাস করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। এই ঘটনাতেও কার্টুনিস্ট বালার বিরুদ্ধে মামলা আনা হয়েছে ভারতীয় দন্ডবিধির ৫০১ ধারায়। যাতে কোনও অবমাননাকর ছবি ছাপা বা খোদাই করা অপরাধ এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৭ ধারায়, যাতে কোনও অশ্লীল বিষয়বস্তু ইলেকট্রনিক্যালি প্রকাশ করা দন্ডনীয়। এদিন তিরুনেলভেলি জেলা আদালত জি বালাকে জামিন দিলেও রাজ্য সরকার অবশ্য দাবি করেছে তাদের পদক্ষেপে কোনও ভুল ছিল না। তামিলনাডুর আইনমন্ত্রী সি ভি ষণ্মুগম বলেন, "সব কিছুরই তো একটা সীমা থাকবে, না কি? যেভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এবং একজন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ-প্রধানকে অত্যন্ত কুরুচিকর ভঙ্গীতে উপস্থাপন করা হয়েছে - সেটা তো সবাই আপনারা দেখেছেন। তিনি জামিন পেয়েছেন ভাল কথা, দেশের আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন পাওয়ার অধিকার তার আছে। কিন্তু আমি বলব, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে যদিও আমরা মর্যাদা দিই - সেই স্বাধীনতারও কিন্তু একটা মাত্রা আছে।" জামিন পাওয়ার পর জি বালা নিজে জানিয়েছেন, তিনি কোনও খুন বা ডাকাতি কিছুই করেননি। শুধু সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করেছেন মাত্র, আর নিজের আঁকা কার্টুনের মাধ্যমে সেটা তিনি চালিয়েও যাবেন। কিন্তু ভারতে সংবাদকর্মীরা অনেকেই বলছেন, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে সরকারের কাজকর্ম নিয়ে হাসিঠাট্টা বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের বিরুদ্ধেও যেভাবে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে তাতে তাদের কাজ ক্রমশ আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা