মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া পৌনে চার লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে দুই লাখের বেশি শিশু মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে জানিয়ে জরুরি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল- ইউনিসেফ।
জাতিসংঘের এ সংস্থার শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান জ্যঁ লিবিকে উদ্ধৃত করে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এই মানবিক সঙ্কট ক্রমশ বড় আকার ধারণ করছে। আর এই সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে শিশুরা। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, শরণার্থীদের মোট সংখ্যার ৬০ শতাংশই শিশু।”
ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে ইউনিসেফের সহায়তার জরুরি সামগ্রী কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানিয়ে লিবি বলেন, বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে ক্যাম্পগুলোতে সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার। সেজন্য প্রাথমিকভাবে ৭৩ লাখ ডলার প্রয়োজন।
মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়ি ও সেনা ক্যাম্পে হামলার পর সেনা অভিযানের প্রেক্ষাপটে গত ২৫ অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল চলছে।
প্রতিদিন যে সংখ্যায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে তা ‘নজিরবিহীন’। ৪ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেবল ছয় দিনেই দুই লাখ ২০ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছে।
“তাদের বাংলাদেশে আসার এই প্রবণতা শিগগিরই থামার কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।”
ইউনিসেফ বলছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় পাওয়া বিপুল সংখ্যক শিশু বহুদিন ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি। তারা ক্ষুধার্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়ছে। রাখাইন থেকে দীর্ঘ দুর্গম পথ পেরিয়ে আসতে গিয়ে তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখনই তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন।
“এই শিশুরা এখনও ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন, সেই সঙ্গে প্রয়োজন মানসিক সহায়তা। আমরা দেখেছি, ক্যাম্পগুলোতে অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন। বাংলাদেশে আসার পথেই অনেক মা সন্তান প্রসব করেছেন,” বলা হয় বিবৃতিতে। তারা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন সেইসব শিশুদের নিয়ে, যারা পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এরকম ১ হাজার ১২৮ জন শিশুকে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো শনাক্ত করতে পেরেছে এবং আগামী দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।
এ পরিস্থিতিতে দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশুর জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, শরণার্থী শিবিরগুলো প্রতিদিনই বড় হচ্ছে এবং সেখানে সুপেয় পানি ও পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
“পানিবাহিত কোনো রোগ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেই চেষ্টা আমরা করছি। এখানে বহু নারী, শিশু ও বৃদ্ধ অল্প জায়গার মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে ক্যাম্পের শিশুরা পানিবাহিত রোগের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে, যা আমাদের ঠেকাতে হবে।”
আর সেজন্য প্রাথমিকভাবে ৭৩ লাখ ডলার প্রয়োজন।