নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কন্সাল জেনারেল শাহেদুল ইসলাম গৃহকর্মী নির্যাতন এবং ঠকানোর মামলা থেকে শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি পেয়েছেন। কুইন্স সুপ্রিম কোর্ট জজ ব্যারি ক্রন গত মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট এটর্নির ডেপুটি কম্যুনিকেশন্স ডাইরেক্টর ইলকিমুলসিয়া লিভিংস্টন জানান, গৃহকর্মী মো. আমিনকে মামলার বিবাদী মো. শাহেদুল ইসলাম ন্যূনতম মজুরি প্রদান করতে ব্যর্থতার দোষ স্বীকার করেছেন এবং তিনি মাননীয় জজ ব্যারি ক্রনের সামনে ১০ হাজার ডলার প্রদান করেন। এরপরই তাকে শর্তসাপেক্ষে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। গত বছরের ১২ জুন বাংলাদেশের এই কূটনীতিককে প্রচলিত সকল রীতি উপেক্ষা করে কুইন্সের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে পারিশ্রমিক না দেয়াসহ ৩৩ ধরনের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন কুইন্স কাউন্টি গ্র্যান্ড জুরিরা। কিন্তু মাননীয় আদালত ন্যায্য পারিশ্রমিক ছাড়া অন্য কোনটিরই সত্যতা খুঁজে না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। শাহেদুলের (৪৫) আইনজীবী ডেনিয়েল আর্শেকের উদ্ধৃতি দিয়ে এ সংবাদদাতাকে এ তথ্য জানান কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান। জজ ব্যারি ক্রন শাহেদুল ইসলামকে বেকসুর খালাস প্রদানের সময় তার আটককৃত পাসপোর্টও অবিলম্বে ফেরৎ প্রদানের নির্দেশ দেন। আর এর মধ্য দিয়েই দীর্ঘ ৭ মাসের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির অবসান ঘটলো। কারণ, এই গ্রেপ্তারের সংবাদটি সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস-সহ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় সকল মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়। গ্রিনকার্ডপ্রাপ্তির প্লট তৈরির অভিপ্রায়ে ক্লিন ইমেজের এই কূটনীতিককে ফাঁসানোর প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে উল্লেখ করে শাহেদুল গ্রেপ্তারের পরই বেশ ক'টি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশি গণমাধ্যমগুলো। শাহেদুল তার গৃহকর্মী মো. রুহুল আমিনকে বেতন-ভাতা দিয়েছেন বলে তথ্য-প্রমাণ এবং সেই অর্থে বাংলাদেশে সহায়-সম্পদের ধারাবিবরণীও নিউইয়র্ক হতে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানায় ছাপা হয়। একইসাথে শাহেদুলের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ যে সত্য নয়, সে বক্তব্য নিয়ে প্রবাসীরাও কুইন্স সুপ্রিম কোর্টের সামনে মানববন্ধন করেন। সময়ের পরিক্রমায় সে সব তথ্য ও প্রবাসীদের অভিমতই সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হলো। মামলা থেকে খালাসের পর মৃদুভাষী কূটনীতিক মো. শাহেদুল ইসলাম প্রবাসীদের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘আমার সেই চরম দুঃসময়ে মিডিয়ার অনেকেই নির্ভীক চিত্তে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলে আমি সাহস পেয়েছি। সেই সাহসের পথ বেয়েই আজকের এ রায় পেলাম।’ উল্লেখ্য, শাহেদুলকে টেকনিক্যাল কারণে কিছু দিন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে বদলি করা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগ্রহে পুনরায় তাকে একই পদে বাংলাদেশ কন্স্যুলেটে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। আরও উল্লেখ্য, একই ধরনের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া জাতিসংঘের অপর কূটনীতিক হামিদুর রশীদকেও এর আগে ফেডারেল কোর্ট বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন।