ঘরের মাঠে দুর্দান্ত বাংলাদেশ। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের আসল চ্যালেঞ্জ বিদেশের মাটিতে। ক্রিকেট বোদ্ধারা বাংলাদেশকে নিয়ে এমন মূল্যায়নই করে আসছিল দীর্ঘদিন।
পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তিকে বাংলাদেশ হেসেখেলেই হারিয়েছে ঘরের মাটিতে। কিন্তু বিদেশের মাটিতে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই দিশেহারা বাংলাদেশ! নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। শনিবার তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ হারল ৮ উইকেটে। আগের দুই ম্যাচের থেকে এ ব্যাবধানটা একটু বেশিই বটে!
দ্বিতীয় মেয়াদে সীমিত পরিসরের ক্রিকেটে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর এবারই প্রথম হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পেতে হলো মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। দায়িত্ব নেওয়ার পর মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ৭টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে। প্রতিটি দেশের মাটিতে। ৭টির মধ্যে মাশরাফির দল জিতেছিল ৬টিতে। এটি মাশরাফির দ্বিতীয় সিরিজ পরাজয়।
আগের দুই ম্যাচের পর বাংলাদেশের শুরুটা এদিনও ছিল দুর্দান্ত। টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস শুরু থেকেই দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করে আসছিলেন। দুই ওপেনারের ব্যাটে ২১ ওভারে বিনা উইকেটে উঠেছিল ১০০ রান। তখন মনে হচ্ছিল, অনায়াসেই ২৮০-৩০০ রানের পুঁজি পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটা আর হলো কই! আড়াই শই হলো না। শেষ ওয়ানডেতে ৯ উইকেটে বাংলাদেশ তুলেছে ২৩৬ রান। জবাবে নিউজিল্যান্ড ৫২ বল আগে ৮ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে। ফলাফল নিউজিল্যান্ড ৩: ০ বাংলাদেশ।
বিনা উইকেটে ১০২ রান তোলা বাংলাদেশ ১৭৯ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল। তবে অভিষেকে ২৪ রান করা নুরুল হাসান দ্বিতীয় ম্যাচে দলের বিপদে খেলেন দৃঢ়তাপূর্ণ ইনিংস। শেষ দিকে তার মূল্যবান ৪৪ রানের সুবাদেই লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। শেষ ওভারে ম্যাট হেনরিকে ফিরতি ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩৯ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ৪৪ রানের ইনিংসটি সাজান উইকেটকিপার এই ব্যাটসম্যান। নয় নম্বরে নেমে নুরুলকে ভালো সঙ্গ দেন মাশরাফি। স্যান্টনারের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে প্যাটেলের তালুবন্দি হওয়ার আগে ১৮ বলে ১৪ রান করেন মাশরাফি।
এর আগে উদ্বোধনী জুটিতে ১০২ রান জমা করেন তামিম ও ইমরুল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম শতরানের জুটি পাওয়ার পর পথ ভুলতে বসে বাংলাদেশ। শর্ট থার্ড ম্যানে নেইল ব্রুমের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন ইমরুল (৪৪)। উইকেটে এসে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে আসেন। আউট হওয়ার আগে ম্যাট হেনরির পরপর দুই বলে দুই চার মেরেছিলেন সাব্বির। এরপর উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১৪ বলে ৪টি চারে ১৯ রান করা ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান। হতাশ করেন মাহমুদউল্লাহ। মিডল অর্ডার এ ব্যাটসম্যান প্রথম দুই ওয়ানডের পর ফ্লপ তৃতীয় ম্যাচেও। সাউদির শর্ট বলে মিড উইকেটে জেমস নিশামকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ (৩)। বিপদে পড়া বাংলাদেশকে আরো বিপদে ফেলে আসেন হাফসেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া তামিম। আগের পাঁচ ওভারের মধ্যেই আউট হন তিন ব্যাটসম্যান। হাফসেঞ্চুরি করা তামিমের টিকে থাকাটা তাই খুব দরকার ছিল। কিন্তু তিনিও সাজঘরে ফেরেন তিন সতীর্থের দেখানো পথ ধরে। নিশামের লেংথ বল স্লগ খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টপ-এজ হয়ে বল উঠে যায় আকাশে। পয়েন্ট থেকে দৌড়ে গিয়ে আরেকটি ভালো ক্যাচ নেন ব্রুম। ৮৮ বলে ৫টি চারের সাহায্যে তামিম করেন ৫৯।
৭ ওভার পর বাংলাদেশ শিবিরে জোড়া আঘাত করেন জিতান প্যাটেল। পঞ্চম উইকেটে মোসাদ্দেককে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা চালান সাকিব। কিন্তু জিতান প্যাটেলের একই ওভারে দুজনই সাজঘরে ফেরেন। সাকিব কাটা পড়েন রানআউটে। বল লেগ সাইডে ঠেলে সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু দৌড়ে গিয়ে বল ধরে সরাসরি থ্রোয়ে নন-স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দেন উইকেটকিপার রনকি। রানআউট হওয়ার আগে সাকিব ৩৫ বলে করেন ১৮। তিন বল পরেই এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মোসাদ্দেক (১৩ বলে ১১)। তাদের বিদায়ের পর দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন তানভীর হায়দার। কেন উইলিয়ামসনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরার সময় তার নামের পাশে ১১ বলে ৩ রান।
শেষ দিকে নুরুল হাসান সোহানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ২৩৬ রানের পুঁজি পায়। বল হাতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন ম্যাট হেনরি।
বোলিংয়ে শুরুতেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন দ্বিতীয় ম্যাচে বিশ্রামে থাকা মুস্তাফিজুর রহমান। নিজের প্রথম ওভারে টম লাথামকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মুস্তাফিজ। দ্বিতীয় ওভারেই মুস্তাফিজ বাংলাদেশকে দিতে পারতেন দ্বিতীয় সাফল্য। কিন্তু স্লিপে ইমরুল ক্যাচ মিস করে ম্যাচটিই মিস করে বসলেন! নেইল ব্রুম শূন্য রানে জীবন পাওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাননি। বোলারদের কড়া শাসন করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। চোখের পলকে সেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে যান তিনি। কিন্তু সেই মুস্তাফিজই তার লাগাম টেনে ধরেন। ৯৭ রানে মুস্তাফিজ আউট করেন ব্রুমকে। গালিতে ব্রুমের অসাধারণ ক্যাচ ধরেন মাশরাফি। দ্বিতীয় উইকেটে ব্রুমকে সঙ্গ দেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। দুজন ৩১.৩ ওভারে ১৭৯ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে আনেন।
ব্রুম আউট হওয়ার পর জেমস নিশামকে নিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে নিউজিল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসন ৯৫ ও জেমস নিশাম ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন।