বাংলা চলচ্চিত্রের দিকপাল নায়করাজ রাজ্জাক অগণিত মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত হলেন। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েই তিনি শায়িত হলেন কবরে। গতকাল দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানায় নায়করাজকে। তার আগে নায়করাজের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় প্রিয় কর্মস্থল এফডিসিতে। তারও আগে গতকাল সকালে শেষবারের জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নায়করাজের নিজ বাসভবনে। এফডিসি ও গুলশান আজাদ মসজিদে রাজ্জাকের দুই দফা জানাজা সম্পন্ন হয়। মেজ ছেলে রওশন হোসেন বাপ্পি দেশে ফেরার পর আজ সকাল ১০টায় নায়করাজকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। রাজ্জাকের মরদেহ রাখা হয়েছিলো ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ২১ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ছবিঃ শামীম আহম্মেদ
গতকাল সকালে তার মরদেহ শেষবারের মতো নিয়ে যাওয়া হয় গুলশানের নিজস্ব বাসভবন ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’তে। সেখান থেকে বেলা ১১টায় মরদেহ নেওয়া হয় তার প্রিয় কর্মস্থল এফডিসিতে। শেষবারের মতো নায়করাজের আগমনে শোকার্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয় এফডিসিতে। এফডিসিতে তাকে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ। সেখানে শ্রদ্ধা জানায় তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র পরিবার, সিনেম্যাক্স মুভি পরিবার, আওয়ামী সাংস্কৃতিক লীগ, বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাব, চলচ্চিত্র গ্রাহক সংস্থা, চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, সিনে স্থির চিত্রগ্রাহক সমিতি, জাসাসসহ বিভিন্ন সংগঠন। ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, অভিনেতা আলমগীর, চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী, সুচন্দা, ববিতা, চম্পা, শাবনূর, চিত্রনায়ক শাকিব খান, ফেরদৌস, আমিন খান, রুবেল, আহমেদ শরীফ, ওমর সানী, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি অভিনেতা মিশা সওদাগর, চলচ্চিত্র পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, চলচ্চিত্র পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম প্রমুখ। এফডিসিতে নায়করাজকে শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
ছবিঃ শামীম আহম্মেদ
এফডিসিতে হাসানুল হক ইনু বলেন, এ দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য আমৃত্যু নায়করাজ রাজ্জাক ভেবেছেন। আমরা সরকারিভাবে তার এই কর্মকাণ্ডকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করব, যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তার কর্মময় জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
উপস্থিত সবার উদ্দেশে রাজ্জাকের বড় ছেলে অভিনেতা বাপ্পারাজ বলেন, আমার আব্বা সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। তিনি জীবনের পুরোটা সময় আপনাদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
এফডিসিতে শেষবারের মতো রাজ্জাককে দেখতে এসে নায়িকা সুচন্দা বলেন, রাজ্জাক নায়কের মতো রুপালি পর্দায় এসেছিলেন। তার চলে যাওয়াটাও নায়কের মতোই। তিনি কখনও কারও কাছে ছোট হননি। বাস্তব জীবনেও তিনি মহানায়ক ছিলেন।
ছবিঃ শামীম আহম্মেদ
এফডিসি থেকে সর্বস্তরের জনতার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয় রাজ্জাকের মরদেহ। তার অনেক আগেই সেখানে আসতে শুরু করেন রাজ্জাকের ভক্ত-অনুরাগীরা। হাজার হাজার মানুষ ফুল হাতে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন তাদের প্রিয় অভিনেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় এ নাগরিক শ্রদ্ধানুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। সেখানে রাজ্জাকের মরদেহের পাশে ছিলেন দুই ছেলে বাপ্পরাজ ও সম্রাট, চিত্রনায়ক জাভেদ ও শাকিব খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিএনপির পক্ষে শ্রদ্ধা জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ অনেকে। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে রাজ্জাককে শ্রদ্ধা জানায় বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, অভিনয় শিল্পী সংঘ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, এনটিভি, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, ঋষিজ, বাংলাদেশ টেলিভিশন, ওয়ার্কার্স পার্টি, দৃষ্টিপাত নাট্য সংসদ, মুক্তধারা সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, বাউল একাডেমি ফাউন্ডেশন, যুব সমিতি, সুবচন নাট্য সংসদ, দনিয়া সাংস্কৃতিক জোট, ডিরেক্টরস গিল্ড, দেশ টিভি, প্রজন্ম ৭১, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি প্রভৃতি।
ছবিঃ শামীম আহম্মেদ
ওবায়দুল কাদের বলেন, দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে তিনি আমাদের চলচ্চিত্রে অবদান রেখেছেন। তার চলে যাওয়ার ক্ষতি অপূরণীয়। রাজ্জাক ছিলেন এ বাংলার উত্তম কুমার।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস দেখলে বলতে হয়, যে ব্যক্তির ওপর ভর করে বাংলা চলচ্চিত্র দাঁড়িয়েছিল তিনি রাজ্জাক। নিজের দক্ষতা, নিজের গুণে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তিনি আমাদের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন। আজ বাংলা চলচ্চিত্রের প্রধান স্থপতি চলে গেলেন।