সৌম্য সরকার হয়তো খানিকটা আফসোস করছেন এই ভেবে, আয়ারল্যান্ড যদি আর ১৫-২০ রান বেশি করত! তাহলেই হয়তো ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা পেয়ে যেতেন। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান যে ৮৭ রানে অপরাজিত থাকতে দল জিতে গেছে। ওয়ালটন ত্রিদেশীয় সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে সহজেই ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
ব্যাটিং কিংবা বোলিং, বাংলাদেশের কাছে আয়ারল্যান্ড পাত্তাই পায়নি, স্রেফ উড়ে গেছে। এর বড় কৃতিত্ব ৪ উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজুর রহমানের। তার বারুদে বোলিংয়ে আইরিশরা অলআউট হয়ে যায় মাত্র ১৮১ রানে। সৌম্যর অসাধারণ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ সেটি পেরিয়ে যায় ১৩৭ বল বাকি থাকতেই।
আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম ম্যাচটা ভাসিয়ে নিয়েছিল বৃষ্টি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে হার। শুক্রবার আইরিশদের হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ। এই জয়ের পর ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে আছে মাশরাফির দল। দুই জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে নিউজিল্যান্ড। তিনে থাকা আয়ারল্যান্ডের পয়েন্ট ২।
ডাবলিনের মালাহাইডে ছোট লক্ষ্য তাড়ায় এক প্রান্তে তামিম ছিলেন সতর্ক। প্রথম তিন ওভারের ১৮ বলের ১৭টিই খেলেছেন তিনি, রান করেছেন ১০। অন্য প্রান্তে সৌম্য খেলেছেন আক্রমণাত্মক।
দুই ওপেনারের ব্যাটে বাংলাদেশ পায় ভালো সূচনা। তবে তামিম ৩ রানের জন্য ফিফটি করতে পারেননি। কেভিন ও’ব্রায়েনের গুড লেংথ বলে উইকেটকিপার নেইল ও’ব্রায়েনকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৫৪ বলে ৬ চারে খেলেন ৪৭ রানের ইনিংস। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৯৫ রান।
তামিম না পারলেও সৌম্য তুলে নেন দারুণ ফিফটি। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জর্জ ডকরেলের বলে চার হাঁকিয়ে ৪০ বলে স্পর্শ করেন মাইলফলক। ফিফটি করতে ৫টি চারের সঙ্গে হাঁকান দুটি ছক্কা।
ফিফটির পর আরো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন সৌম্য। তিনে নামা সাব্বিরও শুরু থেকেই খেলেছেন দারুণ সব শট। দুজনই ম্যাচ শেষ করে আসতে পারতেন। কিন্তু জয় থেকে ১১ রান দূরে থাকতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাব্বির। ৩৪ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ৩৫ করেন প্রথম দুই ম্যাচে জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হওয়া ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
সাব্বির ফিরলেও সৌম্য ম্যাচ শেষ করেই এসেছেন। লক্ষ্যটা আরেকটু বড় হলে হয়তো সেঞ্চুরিও পেয়ে যেতেন! ৬৮ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ৮৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি সাজান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ছিলেন ৩ রানে।
এর আগে মালাহাইডের সবুজ উইকেটে টস জিতে আয়ারল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন মাশরাফি। বোলিংয়ের বাংলাদেশের শুরুটাও হয় দারুণ। ইনিংসের প্রথম ওভারটি রুবেল হোসেন নেন মেডেন। পরের ওভারে তৃতীয় বলেই বাংলাদেশকে সফলতা এনে দেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বলে খোঁচা মেরে শর্ট থার্ডম্যানে সাব্বির রহমানকে ক্যাচ দেন পল স্টার্লিং। শূন্য রানেই এক উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড।
অষ্টম ওভারে উইকেট পেতে পারতেন অধিনায়ক মাশরাফিও। কিন্তু শর্ট এক্সট্রা কভারে উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন। অবশ্য পরের ওভারেই বল হাতে পোর্টারফিল্ডকে নিজের ফিরতি ক্যাচ বানিয়ে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন মোসাদ্দেক।
সাকিব আল হাসান তার দ্বিতীয় ওভারে অ্যান্ডু ব্যালবিরনিকে ফেরালে ৬১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আয়ারল্যান্ড। এরপর দলে ফেরা এড জয়েস ও নেইল ও’ব্রায়নের ৫৫ রানের জুটিটাই যা একটু বাংলাদেশের বোলারদের ভুগিয়েছে। এ জুটি ভাঙার পরই আবার পথ হারায় স্বাগতিকরা।
মুস্তাফিজের তোপে ৩ উইকেটে ১১৬ থেকে দ্রুতই আইরিশদের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৩৬, ২০ রানেই নেই ৪ উইকেট! নেইল ও’ব্রায়েনকে ফিরিয়ে ইনিংসের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটিটা ভাঙেন মুস্তাফিজ। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৬ রান করা জয়েসকে তামিমের ক্যাচ বানিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেকে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট নেন সানজামুল ইসলাম।
এরপর মুস্তাফিজ তার পরপর দুই ওভারে ফিরিয়েছেন কেভিন ও‘ব্রায়েন আর গ্যারি উইলসনকে। দেড়শর আগেই অলআউট হওয়ার শঙ্কা পড়া আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহটা ১৮১ হয়েছে মূলত জর্জ ডকরেল ও ব্যারি ম্যাক্যার্থির ৩৫ রানের অষ্টম উইকেট জুটিতে।
ম্যাক্যার্থিকে এলবিডব্লিউ করে ইনিংসে নিজের দ্বিতীয় উইকেট নিয়েছেন সানজামুল। ৪৭তম ওভারে টানা দুই বলে ডকরেল ও পিটার চেজকে ফিরিয়ে স্বাগতিকদের ইনিংস গুটিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। দুজনই উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হয়েছেন। মুশফিকের ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে একহাতে চেজের নেওয়া ক্যাচটা ছিল দারুণ। পরে এলো দারুণ এক জয়ও!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড: ৪৬.৩ ওভারে ১৮১ (জয়েস ৪৬, নেইল ও’ব্রায়েন ৩০, ডকরেল ২৫, পোর্টারফিল্ড ২২; মুস্তাফিজ ২৩/৪, মাশরাফি ২/১৮, সানজামুল ২/২২, মোসাদ্দেক /২১, সাকিব ১/৩৮)
বাংলাদেশ: ২৭.১ ওভারে ১৮২/২ (সৌম্য ৮৭*, তামিম ৪৭, সাব্বির ৩৫, মুশফিক ৩*; কেভিন ও’ব্রায়েন ১/২২, ম্যাক্যার্থি ১/৪২)
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুস্তাফিজুর রহমান।