দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মত্স্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। শুক্রবার বিকেল ৫টায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকায় বিশেষ ধরনের জাল, বালতি, চার্জ লাইট নিয়ে অপেক্ষা করছিল। মধ্যরাতে স্বাভাবিক গতিতে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। একই সঙ্গে শুরু হয় সংগ্রহকারীদের তত্পরতা। গতকাল ভোর থেকে পুরোদমে কার্প জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের উৎসবে মেতে ওঠে সংগ্রহকারীরা। সাধারণত রুই, কাতল, মৃগেল ও কালবাউশ মাছ বছরের এ সময়ে ডিম ছাড়ে। হাটহাজারী ও রাউজানের ডিম সংগ্রহকারী শফিউল, লোকমান, কামাল সওদাগর, সজল বড়ুয়াসহ বেশ কয়েকজন জানান, ভাটার সময় ডিম ছেড়েছে মা মাছ। ভাটার স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে মা মাছও ডিম দিতে দিতে মদুনাঘাটের দিকে চলে আসে। একেকজন ডিম সংগ্রহকারী আধা বালতি থেকে কয়েক বালতি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছে। তবে রাতের বেলা হওয়ায় ডিম সংগ্রহ করে সুবিধা করতে পারেনি অনেকে। চট্টগ্রাম জেলা মত্স্য কর্মকর্তা মমিনুল হক জানান, হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার খবর পেয়ে সংগ্রহকারীরা নৌকা নিয়ে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে উত্সবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করছে। এ সুযোগে দুর্বল হয়ে পড়া মা মাছগুলোকে যাতে কেউ ধরতে না পারে সেজন্য মত্স্য দফতরের উদ্যোগে টহল দেওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। হালদা বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া জানান, প্রথম নাপিতের ঘোনা এলাকায় ডিম দেখা দেয়। এরপর খলিফার ঘোনা। সকাল থেকে রামদাশ মুন্সীর হাট থেকে মদুনা ঘাট পর্যন্ত চলে ডিম আহরণ। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে-এ বছর ১৬৮০ কেজির মতো ডিম পাওয়া যাবে। আর এ থেকে রেণু পাওয়া যাবে ২৮ কেজির মতো। কিছু তো নষ্ট হবেই। সব বাদ দিয়ে প্রতি কেজি রেণুতে ৪-৫ লাখ পোনা হবে। উল্লেখ্য, প্রাকৃতিকভাবে উত্পন্ন হালদার মাছের পোনা দ্রুত বড় হয়, দামও হ্যাচারির পোনা থেকে তুলনামূলক কম। তাই সারাদেশে হালদার পোনার কদর বেশি। মাছের পোনা ব্যবসায়ীরা সারা বছর তাকিয়ে থাকে এ দিনটির দিকে—কখন ডিম ছাড়বে হালদা নদীর মা মাছ। আর সেই প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে শুক্রবার মধ্যরাতে।