গ্রিসের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বন্ধন আরো দৃঢ় করার প্রত্যয় নিয়ে এথেন্সে অনুষ্ঠিত হলো ‘বাংলাদেশ-গ্রিস মৈত্রীতে সংস্কৃতির সেতু’ শীর্ষক কর্মশালা।
বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী এবং গ্রিক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মঙ্গলবার এথেন্সের এলসাস পার্কে অনুষ্ঠিত হয় এই কর্মশালা। গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং এথেন্সের নিউ ফিলাডেলফিয়া সিটি কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
সকাল ১০ ঘটিকায় কর্মসূচির উদ্বোধন করেন গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন এবং নিউ ফিলাডেলফিয়া সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মিস্টার আরিস ভাসিলোপুলোস। এই সময় ভাইস মেয়র মিজ ইতোচিয়া পাপালোকা, রাষ্ট্রদূতের সহধর্মীনি মিসেজ শায়লা পারভিন, দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) ড. সৈয়দা ফারহানা নূর চৌধুরী, প্রথম সচিব সুজন দেবনাথ এবং গ্রিক চিত্রশিল্পী মিজ মারিভা জাকারোফ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে নিউ ফিলাডেলফিয়ার ১০টি স্কুলের দুই শত এর বেশি গ্রিক ছাত্র-ছাত্রী এবং এথেন্সে অবস্থিত বাংলা স্কুল ‘দোয়েল একাডেমির’ ছাত্র-ছাত্রীসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী শিশু কিশোর অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন দোয়েল একাডেমি এবং গ্রিক স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকবৃন্দ এবং প্রবাসী বাংলাদেশী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মেয়র সকলকে স্বাগত জানান। তিনি বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী, তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষকদের এই যৌথ আয়োজনে অংশগ্রহণের জন্য শুভেচ্ছা জানান। মেয়র বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশে দূতাবাসকে এই আয়োজনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ও গ্রিস দুটি দেশই সমৃদ্ধ সংস্কৃতির অধিকারী। বন্ধুতপূর্ণ এই দুটি দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ আরো দৃঢ় হচ্ছে। যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালা বাংলাদেশ ও গ্রিসের সুদৃঢ় সাংস্কৃতিক বন্ধনের পরিচয় প্রকাশ করে।
রাষ্ট্রদূত কর্মসূচিতে উপস্থিত বিপুল সংখ্যাক ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, শিশু কিশোররা দুই দেশের সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শিশুদের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির কথাও রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি কর্মশালা আয়োজনের জন্য নিউ ফিলাডেলফিয়ার মেয়রকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
দুই দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলাদেশ ও গ্রিসের জাতীয় পতাকা নিয়ে বিশেষ সম্প্রীতি র্যালির মাধ্যমে অনুষ্ঠান সূচনা করে। এরপর দুই দেশের শিশু কিশোররা তাদের নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী স্বাগত নৃত্য পরিবেশন করে। নৃত্য পরিবেশনের পর সমবেত শিশু কিশোরদের উদ্দেশ্যে গ্রিক ভাষায় বাংলাদেশের পরিচিতিমূলক একটি নিবন্ধ পাঠ করে শুনানো হয়। এরপর গ্রিক চিত্রশিল্পী মিজ মারিভা জাকারোফের তত্ত্বাবধানে চিত্রাংকন শুরু হয়। দুই দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, গ্রিক মিথোলজি, দুই দেশের প্রকৃতি এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে তুলে ধরে চিত্র অংকন করে।
উল্লেখ্য মিজ মারিভা সম্প্রতি বাংলাদেশ ভ্রমণ করে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে চিত্রাংকন কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। এলসাস পার্কের কর্মশালায় অংকিত চিত্রকর্মসমূহ আগামী ৭ নিউ ফিলাডেলফিয়া সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত এক প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হবে। চিত্রকর্মের শেষে শিশু কিশোরদের জন্য একটি ম্যাজিক শো আয়োজন করা হয়।
এই কর্মশালায় উপস্থিত অভিভাবক এবং শিক্ষকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন যে, এর মাধ্যেমে বাংলাদেশ ও গ্রিসের বিপুল সংখ্যক শিশু কিশোর দুই দেশ সম্পর্কে জানতে পারলো এবং আন্তঃসংস্কৃতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য এই ধরণের কর্মশালা আরো বেশি করে আয়োজন করতে তারা অনুরোধ করেন। বাংলাদেশ দূতাবাস এই ধরণের সংস্কৃতিক কর্মসূচি অব্যহত রাখার আশা ব্যক্ত করে।