বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। কেউ বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সুযোগ, সবচেয়ে বড় হাতছানি। আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টার অপেক্ষা। তারপরই বাংলাদেশ শুরু করবে ইতিহাসের চূড়ায় ওঠার সেই লড়াই। হ্যা, ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সামিল হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে আজ লড়বে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
বাংলাদেশ সেমিফাইনালে—এই একটা তথ্যই যথেষ্ট ছিল রক্তে নাচন তোলার জন্য। কিন্তু এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আবার দারুণ এক প্রতিপক্ষ ভারত। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই সেটা ক্রিকেট ম্যাচের চেয়েও বেশি কিছু। মাঠের বাইরে-ভেতরে এ এক দারুণ রোমাঞ্চের নাম। আর এই রোমাঞ্চ বুকে নিয়েই মাঠে গড়াবে আজকের সেমিফাইনাল; বাংলাদেশ-ভারত সেমিফাইনাল।
বার্মিংহামের এজবাস্টন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এই রুদ্ধশ্বাস লড়াই। খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে তিনটা থেকে। আর খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন, গাজী টেলিভিশন ও মাছরাঙ্গা টেলিভিশন।
তবে কাগজ-কলমের হিসেবে এই ম্যাচের আগে অনেকটাই এগিয়ে ভারত। তারা এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। সর্বশেষ সাক্ষাতে, অনুশীলন ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়েছে। এছাড়াও ভারতীয় দলটা এখন আছে দুর্দান্ত ফর্মে। দলের এক ঝাঁক ব্যাটসম্যান সব সময়ের মতো রানের ধারাতে আছেন। নতুন ব্যাপার হলো, ভারতীয় পেস বোলিং ইদানিং বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণগুলোর একটা হয়ে উঠেছে।
ইতিহাসও ভারতের পক্ষে কথা বলছে। দুদল এ পর্যন্ত ওয়ানডেতে ৩২ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র ৫টি ম্যাচ। বিপরীতে ভারত জিতেছে ২৬টি ম্যাচে।
ফলে র্যাংকিং, ফর্ম ও ইতিহাস বিচারে ভারত এগিয়ে আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এসব ইতিহাসের বস্তাপচা কথা মাঠে নামবে না। মাঠে নামবেন মুস্তাফিজ, মাশরাফি, তামিমরা। যাদের স্মৃতিতে এখন দারুণ টাটকা দেশের মাটিতে ভারতকে বলে কয়ে সিরিজ হারানোর স্মৃতি।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অনুপ্রেরণার অভাব নেই। সেই ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে এই দলটিকে বিদায় করে দিয়েছিলেন তরুণ মুশফিক, তামিমরা। এরপর ২০১৫ সালে এসে দুদলের বিশ্বকাপে এক বিতর্কিত লড়াই। যে লড়াইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটার পর একটা সিদ্ধান্ত যাওয়াতে ছিটকে গেল বাংলাদেশ। আর তারপরই ভারতকে সিরিজ হারানো।
সেই সিরিজ হারানোর ব্যাপারটাই আজকে সবচেয়ে বেশি টাটকা হয়ে সামনে আসবে। কারণ, তারপর থেকে এই প্রথম বাংলাদেশ ও ভারত স্বীকৃত ওয়ানডেতে মুখোমুখি হচ্ছে। সেটা ছিল মুস্তাফিজের অভিষেক সিরিজ। প্রথম ম্যাচে ৫ ও পরের ম্যাচে ৬; ১১ উইকেট নিয়ে শুরু করেছিলেন মুস্তাফিজ। আর সেই তোপেই উড়ে গিয়েছিল ভারতীয় দল। আজ যখন আরেকবার দুদল মুখোমুখি, তখন সেই মুস্তাফিজের প্রসঙ্গ না এসে পারেই না।
মুস্তাফিজ ছাড়াও বাংলাদেশের জন্য বড় একটা ব্যাপার হলো টপ ও মিডল অর্ডারে কয়েকজন ব্যাটসম্যানের দারুণ ফর্ম। বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল আছেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে। দারুণ ছন্দে আছেন মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসান। বিশেষ করে সর্বশেষ ম্যাচে এই দুজন মহাকাব্যিক যে জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ জিতিয়েছেন, সেটা হতে পারে দারুণ এক প্রেরণা। ওই এক জুটিই বাংলাদেশের মনোবল তুঙ্গে তুলে দিতে পারে। আজ দেখার বিষয় বাংলাদেশ সেই মনোবল দিয়ে ইতিহাসের চূড়া স্পর্শ করতে পারে কি না!