আজ রাত পৌনে ১১টায় বাংলাদেশের মাটিতে পা পড়ছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের। শেষ হচ্ছে অপেক্ষার।
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এই টেস্ট সিরিজের জন্য আসলেই ছিল দীর্ঘ প্রতীক্ষা। নির্দিষ্ট করে বললে ১১ বছরেরও বেশি। সেই ২০০৬ সালের এপ্রিলে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া দুটি টেস্ট খেলে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া আবার আসছে। এই দীর্ঘ সময়ে বদলে গেছে কত কিছু। দুটি দলের মধ্যেই প্রজন্মের ব্যবধান ঘটে গেছে। টি-টোয়েন্টি নামের সংকরায়িত ক্রিকেটের উন্মাদনায় সারা বিশ্বই উথালপাথাল। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে আর টেস্ট খেলতে আসেনি। বাংলাদেশকেও তারা টেস্ট খেলতে ডাকেনি নিজের দেশে।
২০১১ সালে তিন ম্যাচের একটি ওয়ানডে সিরিজ অবশ্য খেলে গেছে, সে ছিল সান্ত্বনা। বাংলাদেশকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড) আক্ষরিক অর্থে তখন সান্ত্বনাই দিয়েছিল এই বলে যে, আপাতত তিনটি ওয়ানডেই হোক, পরে সময়-সুযোগ বুঝে দুটি টেস্ট খেলে যাওয়া যাবে। দ্বিপক্ষীয় অনেক যোগাযোগ-প্রক্রিয়া শেষে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে সেই দুটি টেস্ট খেলতে রাজি হলো ২০১৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে। সবকিছু ঠিকঠাক, সারা বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া দলের আগমনের প্রতীক্ষায় সময় গুনছে। ঠিক তখনই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কাকে কারণ দেখিয়ে সফর বাতিল করে দিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও মন গলেনি অস্ট্রেলিয়ার। কদিন পরই অবশ্য শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর করে গেছে। বাংলাদেশ সফলভাবে আয়োজন করেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট, কোনো ক্রিকেট দলই নিরাপত্তা নিয়ে কোনো
অনুযোগ তোলেনি। শুধু অস্ট্রেলিয়াই বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। সে কারণে অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও তাদের দল পাঠায়নি।
২০১৫ টেস্ট সফর বাতিল করার পর অস্ট্রেলিয়া অবশ্য বলেছিল, এ সফরটি তারা পরে সুবিধামতো এক সময়ে করবে। সেই ‘সুবিধামতো সময়টা’ অবশেষে এল। ইংল্যান্ডের নির্বিঘ্ন বাংলাদেশ সফর নিশ্চয়ই ভূমিকা রেখেছে এখানে। ইংল্যান্ড দুটি টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডে খেলে গেছে গত বছরের অক্টোবরে। ইংল্যান্ড দলকে দেওয়া সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়া দলকেও। নিরাপত্তাব্যবস্থা, ম্যাচের ভেন্যু, আবাসন সুবিধা—সবকিছু খতিয়ে দেখে গেছে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদল। তারপরই আলোর মুখ দেখতে পারছে অস্ট্রেলিয়া দলের এই সফর।
ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টটি শুরু হবে ২৭ আগস্ট। ৪ সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিতীয় টেস্ট চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। ২২ আগস্ট দুই দিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে মাঠে নেমে যাওয়ার কথা স্টিভেন স্মিথের অস্ট্রেলিয়া দলের। এই ম্যাচটি নির্ধারিত ছিল ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে। কিন্তু অতিবৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতায় ম্যাচটি সেখানে হবে কি না, তা নিয়ে একটু অনিশ্চয়তা আছে। তবে ইংল্যান্ডের সঙ্গে দুই টেস্টের ১০ মাস পর আবারও সাদা পোশাকের ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত ঢাকার শেরেবাংলা ও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। বর্ষা মৌসুমে এবার অস্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে বাংলাদেশে। এই বৃষ্টি সিরিজটার ওপরও চোখ রাঙাচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস যা বলছে, তাতে আগস্ট মাসজুড়েই হতে পারে বৃষ্টি। বৃষ্টিবিহীন শুষ্ক আবহাওয়ার নিশ্চয়তা মিলবে হয়তো সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সিরিজ তো তার আগেই শেষ!
যদি বৃষ্টির আনুকূল্য মেলে, তাহলে জমজমাট এক সিরিজের আশা করাই যায়। সাম্প্রতিক অতীতে এশিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড মোটেই ভালো নয়। অন্যদিকে ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ দুটি সিরিজেই পিছিয়ে পড়ার পরও বাংলাদেশ লিখেছে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প। এই দুটি মিলিয়ে সিরিজটা বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকার সম্ভাবনা যথেষ্টই উজ্জ্বল।