এস এম জামাল, কুষ্টিয়া: আজ ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার মুক্তি সেনারা রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছোট-বড় ২২ যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে কুষ্টিয়াকে মুক্ত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৯ মাসজুড়েই কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর তুমুল লড়াই চলে। বংশীতলা, চৌড়হাস ও বিত্তিপাড়াসহ কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধকালে পাক হানাদাররা ৬০ হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আর দুই হাজার মা-বোনের ওপর চালায় নৃশংস নির্যাতন। তবে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী কুষ্টিয়ায় চরম প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ ভোরে বাংলার দামাল ছেলেরা কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে পাকিস্তানি হানাদার ক্যাম্পে হামলা চালান। এ যুদ্ধে নিহত হয় অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা। শেষ পর্যন্ত ১ এপ্রিল রাতের আঁধারে পাকিস্তানি বাহিনী কুষ্টিয়া ছেড়ে পালিয়ে যায়। প্রথমবারের মতো মুক্ত হয় কুষ্টিয়া। পরবর্তী সময়ে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন হয়। এরপর থেকে দফায় দফায় প্রচ- বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। তারা আবারও কুষ্টিয়া দখলে নিয়ে বাঙালি নিধন আর গণহত্যার উৎসবে মেতে উঠে। তবে ৬ ডিসেম্বর তিন দিক থেকে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা হানাদারমুক্ত হতে থাকে। ৯ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহর ছাড়া অন্যান্য এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। তবে তুমুল যুদ্ধ চলে কুষ্টিয়ায়। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সাহসী বীর বাঙালি তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা অমিত তেজে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে করে ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার মাটি শত্রুমুক্ত করেন। হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষের গগণবিদারী ‘জয় বাংলা’ সেøাগানে সেদিন কুষ্টিয়ার আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে। পথে প্রান্তরে গড়ে তোলা হয়েছিল বেরিক্যাড। লাঠি-সড়কি, ঢাল-তলোয়ার নিয়ে উপজেলার হরিপুর-বারখাদা, জুগিয়া, আলামপুর, দহকোলা, জিয়ারুখী, কয়া, সুলতানপুর, পোড়াদহ, বাড়াদিসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ ছুটে এসেছিলেন কুষ্টিয়া শহরে। মুক্তির আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছিলেন তারা। মুক্ত দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটসহ বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।