শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪ ১৭ই কার্তিক ১৪৩১
Smoking
 
আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে
প্রকাশ: ১০:০৫ am ২৪-০৮-২০১৭ হালনাগাদ: ১০:১২ am ২৪-০৮-২০১৭
 
 
 


আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ জন্য আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে গণশুনানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ২০১০ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে ছয়বার এবং খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে সাতবার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ছাড়া আপাতত কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। বিইআরসির গণশুনানি নিয়েও প্রশ্ন আছে তাদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে ঘন ঘন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সময় বিইআরসির এক মূল্যায়নে বলা হয়, তেলের দাম কমায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উত্পাদনে ব্যয় কমেছে ৩৪ পয়সা। আর বিদ্যুত্ উত্পাদনে দুই ধাপে গ্যাসের মূল্য বাড়বে ১২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এর ফলে প্রতি ইউনিটে উত্পাদন ব্যয় বাড়বে ৩৪ পয়সা। অর্থাৎ সার্বিকভাবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বিদ্যুতের উত্পাদন ব্যয়ে পড়বে না। তা ছাড়া তেলের দাম আরও কমানোর সুযোগ সরকারের হাতে রয়েছে। বিইআরসির সূত্র জানায়, বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পাইকারি বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ (৭২ পয়সা) বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি। আর বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে ৮ থেকে ১২ শতাংশ হারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী দাম বাড়ানো হলে প্রতি ইউনিটের গড় দাম হবে প্রায় ৭ টাকা ৭১ পয়সা। বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উত্পাদনমূল্য ৫ টাকা ৫৯ পয়সা। এর সঙ্গে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয় যুক্ত করে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত্ সরবরাহ করতে গড় দাম পড়ে ৬ টাকা ৭৩ পয়সা। বিদ্যুতের দাম ছাড়াও গ্রাহক পর্যায়ে ডিমান্ড ও সার্ভিস চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি মিটারে প্রতি মাসে ৩০ টাকা করে ডিমান্ড চার্জ ও ১০ টাকা করে সার্ভিস চার্জ ধার্য আছে। এটা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৪০ টাকা ও ২০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে কোনো কোনো বিতরণ কোম্পানি। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ উত্পাদনে ব্যবহূত জ্বালানির (গ্যাস) দাম বাড়ানো হয়েছে। অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে তেলও (ফার্নেস অয়েল) কিনতে হয় বেশি দামে। ফলে বিদ্যুতের উত্পাদনমূল্য বিক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি পড়ছে। সরকারকে এখনও বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। তাই দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।

তবে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম  বলেন, গ্যাসের ক্ষেত্রে সরকার যেমন কৃত্রিম ঘাটতি দেখিয়ে দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়ানোর কূটকৌশল নিয়েছে। এখানে ন্যায্যতা, নিয়ম-কানুন ও যুক্তি কোনো কিছুই প্রাধান্য পাচ্ছে না। সরকার ব্যবসাবান্ধব ও জনবান্ধব নয়। তিনি বলেন, এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি তো নেই-ই, বরং দাম কমানোর সুযোগ আছে। কিন্তু সরকার দাম বৃদ্ধির পথেই হাঁটছে। আমরা অসহায়। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ এর প্রতিকার করতে পারবে না। এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, সরকার দাম সমন্বয়ের কথা বলে গণশুনানির আয়োজন করে। এই সমন্বয় আসলে দাম বৃদ্ধির প্রাচুর্যপূর্ণ শব্দ। এই শব্দ ব্যবহার করে চালাকি করা হচ্ছে। শুনানিতে যুক্তি দেখিয়ে দাম কমানোর প্রস্তাব নিয়ে গেলে বা আমরা আপত্তির কোনো প্রস্তাব নিয়ে গেলে সেটা আমলে নেওয়া হয় না। এর আগে দাম বাড়ানোর আদেশে বিইআরসির নির্দেশনা ছিল পিডিবি তথা সরকারকে কম খরচে বিদ্যুত্ উত্পাদনের (লিস্ট কস্ট অপশন) বিকল্প পথ অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু তা করা হয়নি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বড় বিদ্যুত্ প্রকল্পের একটিও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। আর এতে উত্পাদন খরচ কমানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া পিডিবিকে বাদ দিয়ে অন্য কোম্পানিকে দিয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন শুল্ক ও কর হিসেবে ১৮ শতাংশ বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপানো হয়। এ ছাড়া পদ্ধতিগত লোকসান (সিস্টেম লস) ও কোম্পানিগুলোর নিজস্ব ব্যয় সাশ্রয়ের তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। অন্যদিকে জ্বালানি খাতে সরকার অতিরিক্ত শুল্ক আদায় করছে। যেমন গ্যাসের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়াও ৪১ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। সাধারণত যেসব পণ্য নিরুত্সাহিত করা হয় সেগুলোর ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত এসব কারণে সরকার কম খরচে বিদ্যুত্ উত্পাদনে ব্যর্থ হচ্ছে। যার দায় সাধারণ মানুষের ওপর চাপানো হচ্ছে। তবে বিদ্যুত্ উত্পাদনে ব্যবহূত জ্বালানি তেল (ফার্নেস) বাজারমূল্যে সরবরাহ করা হলেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান বাজারদরে ফার্নেস তেল থেকে উত্পাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ে ৭ টাকার কম। বেসরকারি যে বিদ্যুেকন্দ্রগুলোকে সরকার ফার্নেস তেল আমদানি করার লাইসেন্স দিয়েছে, তারা বর্তমানে এই দামে সরকারের কাছে বিদ্যুত্ বিক্রি করছে। অন্যদিকে যে বিদ্যুেকন্দ্রগুলো সরকারি মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত দামে ফার্নেস তেল নিচ্ছে, তাদের উত্পাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ে ১২ টাকার বেশি। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি লিটার ফার্নেস তেলের দাম ২২ থেকে ২৪ টাকা। আর বিপিসি বিক্রি করে ৪২ টাকায়।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT