ঝিনাইদহে সুদখোরদের অত্যাচারে ছারখার জন জীবন পরিবার, ভিটে বাড়ি ছাড়া, আত্মহত্যা সহ টাকা আদায়ে শত শত মামলা
জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহে সুদখোরদের অত্যাচারে ছারখার জন জীবন শত শত পরিবার, বাড়িঘর ছাড়া, আত্মহত্যা, টাকা আদায়ে শত শত মামলা কারা হচ্ছে। সাইকেল ব্যবসায়ী রনো দত্তের ঝিনাইদহ শহরে জমজমাট ব্যবসা ছিল। শেরে বাংলা সড়কে ছিল তার জননী সাইকেল স্টোর নামে একটি বড় দোকান। প্রভাব আর প্রতিপত্তির কোন কমতি ছিল না। এরপর ব্যবসা প্রসারের জন্য তিনি চড়া সুদে টাকা নেয়। আর এটাই হলো তাদের কাল। ঝিনাইদহ শহরের সুদখোর পবহাটী গ্রামের ইমরান শাহ ও আর্মি খোকনের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। কিন্তু সুদ আর আসল দিতে দিতে পেরেশান রণো দত্ত সুদখোরদের ভয়ে বাড়ি বিক্রি করে পাড়ি জামায় ভারতে। তেতুলতলা গ্রামের নিখিল ও সুনিল কুমার কুন্ডুরও ঝিনাইদহ শহরে জমজমাট ব্যবসা ছিল। কেসি কলেজের সামনে ছিল তাদের ভাই ভাই স্যানেটারি নামে একটি বড় দোকান। তারাও সুদের টাকা দিতে না পেরে গোপনে ঝিনাইদহের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট বিক্রি করে ভারতে রানাঘাটে স্থায়ী হয়েছে। শহরের কলাবাগান পাড়ার স্বরজিৎ ও চাকলাপাড়ার কোমলের ছিল কোকাকোলার বড় ব্যবসা। সুদির টাকা দিতে না পেরে তারা ভারতে চলে গেছে। শহরের মীর্জা স্টোরের মালিক শেষ পর্যন্ত দেউলিয়া হয়ে পথে বসেছেন। শহরের শেরেবাংলা সড়কের হোমিও ডাক্তার আরিফ আর্মি খোকনের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা সুদের টাকা নিয়ে ২০ লাখ পর্যন্ত দিয়ে শেষ পর্যন্ত সব হারিয়ে পথে বসেছে। শহরে নিজের বাড়ি ও মার্কেট বিক্রি করে এখন ভাড়ার বাড়িতে সববাস করছেন। মধুপুরের তাপস ও তার ভাই পলাশ কুন্ডু এবং পার্কপাড়ার অদৈত শাহা সুদে কারবারে ছারখার হয়ে গেছে। এ ভাবে শহরের চাল ব্যবসায়ী মোকাদ্দেস হোসেন, রিয়াদ কটন সপের মালিক আসলাম হোসেন, ওরিয়েন্টাল স্টোরের মালিক সাবু মিয়া, ইটভাটা মালিক শহিদুল ইসলাম, রবি হার্ডওয়ারের মালিক আব্দুল মান্নন, তমা হার্ডওয়ারের মালিক স্মৃতি কুমার দাস, চাপড়ি মধুপুর বাজারের ব্যবসায়ী রামপাল, শ্যামপাল ও মদনপাল, টাইলস এর দোকানদার মফিজ ও তার ভাগ্নে রুহুল আমিন এবং ট-বাজারের কার্ত্তিক চন্দ্রসহ শত শত প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এখন দেউলিয়া। জমিজাতি ও ভিটেবাড়ি বিক্রি করে আসল টাকা পরিশোধ করলেও সুদের টাকার জন্য উল্টো মামলায় ঝুলছে। ঝিনাইদহ শহরের মর্ডান পাড়ার সিরাজ উদ্দীন বিশ্বাসের ছেলে শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি সুদখোর ইমরানের কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা গ্রহন করে। এ পর্যন্ত তিনি সব টাকা পরিশোধ করেছেন। তারপরও ৬৫ লাখ টাকার মামলা দিয়ে সুদখোর ইমরান হয়রানী করছেন, যার মামলা নং সিআর ৪১৫/১৪, ৪২০/১৪ ও ৪২১/১৪। শহরের প্রতিষ্ঠিত চাল ব্যবসায়ী ইমরানের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ৩৩ লাখ টাকা পরিশোধ করার পরেও তার নামে ৩৪ লাখ টাকা দাবী করে চারটি মামলা দিয়েছেন, যার মামলা নং এসসি ২১৭/১৪, ৪৯৪/১৫, ৩৮৬/১৫ ও ৭৬৭/১৪। ঝিনাইদহ শহরের এইচএসএস সড়কের আসাদ মিয়ার জামাই ইউনুস আলী বেসিক ব্যাংকের ব্লাংক চেক দিয়ে সুদখোর ইমরান শাহর কাছ থেকে অল্প কিছু সুদে টাকা নেয়। পরে টাকা দিতে না পারায় তার নামে গত ২৬ জানুয়ারী ঝিনাইদহ আমলী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে চার লাখ টাকার মামলা ঠুকে দেয়, যার নং ১৭১/১৭। শহরের কবি গোলাম মোস্তফা সড়কের জনতা ইটভাটার মালিক মফিজুল ইসলাম বাবুল জোয়ারদারের নামে ২৬ লাখ টাকা দাবী করে দুইটি মামলা দায়ের করেছে সুদখোর ইমরান শাহ। যার মামলা নং সিআর ৫২২/১৩ ও সিআর ৩০০/১৩। ঝিনাইদহের বিভিন্ন আদালতের পেশকারদের দেওয়া প্রাপ্ত তথ্যমতে, সুদখোরদের দায়ের করা এমন চার শাতাধীক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ ছাড়াও শত শত ব্যবসায়ী ঘর বাড়ি দোকান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে রেখে মাসের পর মাস পালিয়ে বেড়াচেছ সুদখোরদের ভয়ে। এদের ভয়ংকর সন্ত্রাসী বাহিনী আছে, এই বাহিনী দিয়ে তারা বিভিন্ন ভয় ভীতি মারধর করে। ইতিমধ্যে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে হামদহ এলাকার ঠিকাদার বিপ্লব গলায় ফাঁস নিয়ে এবং ঢাকালে হালিম ও আব্দুর রশিদের অকাল মৃত্যু হয়েছে। ঝিনাইদহ শহরের নতুন হাটখোলার চাল ব্যবসায়ী মোকাদ্দেস হোসেন জানান, সুদখোররা টাকা দেওয়ার সময় তাদের কাছ থেকে ব্লাংক চেক ও স্ট্যাম্প সাক্ষর করিয়ে নেয়। এরা ১ লাখ টাকায় প্রতি মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা সুদ নেয় । এই মোটা অংকের সুদ গুনতে হিম সিম খেতে হয় ব্যবসায়ীদের। পরবর্তীতে আসল টাকা দিলেও সুদের টাকা আদায়ে চেক ও স্ট্যাম্পে তিন থেকে চার গুন বেশি পরিমান টাকা বসিয়ে আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। হোমিও ডাঃ আরিফ জানান, সুদখোর আর্মি খোকন সুদের টাকা না দিলে ঐ ব্যবসায়ীর স্ত্রীর সহিত জোর পূর্বক অবৈধ সর্ম্পক করেন। এইভাবে চড়া সুদের ব্যবসা করে এক একজন সুদে ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকার গাড়ির, এবং আলিশান বাড়ির মালিক হয়েছে। এরা যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে সেই সরকারের দলীয় নেতাদের ছত্রছায়াই থেকে এই ব্যবসা চালিয়ে যাই। এদিকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝিনাইদহ শহরে জমজমাট ভাবে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, ব্যাপারীপাড়ার টাইগার ও জাহিদ, পবহাটীর সোহরাব, একই গ্রামের আক্তার শাহ, বিশু মোল্লা, জাহাঙ্গীর, সিরাজুল, বাচ্চু, মিলন, সুদে মুক্ত পবহাটি বিশ্বরোডের পাশে চারতালা বিল্ডং করেছে, বছির মোল্লা, হারেজ মোল্লা, শহিদুল, মইনুল, উদয়পুর গ্রামের শামসুল, আনারুল, আমিরুল ইসলাম, টিটো মন্ডল, তোফাজ্জেল আহম্মেদ, মিন্টু মন্ডল, নুরু মোল্লা, মোফাজ্জেল লস্কার, লাল মিয়া, আলফা লস্কার, মহসিন বিশ্বাস, খাজুরা গ্রামের আব্দুল জোয়ারদার, হাসিবুল ও আত্তাপ মন্ডল, কালিকাপুরের আলী আকবর, জিয়া ও ওসমান আলী, ব্যাপারীপাড়ার আব্দুর রশিদ চান তাজ মহল ফার্মেসির মালিক, আতিক, হামদহ এলাকার টিপু সুলতান ও দিদার, কলাবাগানের আজিজ, ফিরোজ সরদার, গনপুর্তের পিয়ন আব্দুল আলীম, কাঞ্চননগর পাড়ার মনা, আনোয়ার, শহিদ, সাজ্জাদ, ধোপাঘাটার জোমারত, লাভলু, মন্টু বিশ্বাস, রবি হাওলাদার, কাঞ্চননগর মডানর্ পাড়ার মুক্তার, এরশাদ, ফিরোজ, মধুপুর দিঘল গ্রামের মিজান, আলমগীর, চাপড়ির মালেক মল্লিক ও ইরাদ আলীসহ হাজারো সুদখোর গোটা জেলাব্যাপী দাপিয়ে বেড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এই সমস্ত সুদখোররা সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোন নিয়ে এই ব্যাবসা চালিয়ে যাচেছ । এছাড়া বিভিন্ন ভুইফোড় সমিতি ও এনজিওর নামে দাদন ব্যবসা চালিয়ে সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ জানান, সুদে ব্যবসার ব্যাপারে বেশ কয় এক জন আমাকে মোখিক ভাবে জানিয়েছে, তবে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব ।