ইংল্যান্ড দল ধারাবাহিকভাবে ভালো এবং দাপুটে ক্রিকেট খেলছে। জিতেও চলেছে টানা ম্যাচ। আরেকটা দল প্রথম ম্যাচে ধসে যাওয়ার পর উঠে দাঁড়িয়েছে। গ্রুপে শক্ত দুই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে আজ সেমিফাইনালে খেলছে। দলটা-পাকিস্তান। সেই নব্বই দশকের শুরু থেকে পাকিস্তান ক্রিকেটের নামের সঙ্গে আনুষঙ্গিকভাবে আরেকটি শব্দ জড়িয়ে আছে-‘আনপ্রেডিক্টেবল দল’! আপনি হিসাব করলেন এক। আর ম্যাচে পাকিস্তান ঘটিয়ে দিল আরেকটা। দেখছেন জয়ের জন্য টার্গেট খুব সহজ। কিন্তু সেই সহজ টার্গেটই পাকিস্তান কঠিন করে হেরে গেল! আবার যখন ভাবছেন জয় প্রায় অসম্ভব-ঠিক সেখান থেকেই পাকিস্তান ম্যাচ বের করে নিয়ে গেল! উদাহরণের জন্য বেশিদূরে যেতে হবে না। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে গ্রুপে পাকিস্তানের শেষ ম্যাচটা তো সেই প্রমাণই রাখছে। দলের নবম ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আমিরকে সঙ্গে নিয়ে সরফরাজ আহমেদ হার না মানা ৭৫ রান যোগ করে ম্যাচ জিতিয়ে দেবেন-কে ভেবেছিল? পাকিস্তান এমনই-ক্রিকেট মাঠে যা কেউ ভাবেনি, সেটাই তারা করে ফেলে। এভাবেই কঠিন ম্যাচ জেতে। আর সহজতম ম্যাচ হেরে যায়। আজকের সেমিফাইনালের জন্য এই উদাহরণের কোনটা জমা রেখেছে পাকিস্তান? -কে জানে? আনপ্রেডিক্টেবল দলকে নিয়ে প্রেডিক্ট করার ঝুঁকি কে নেয়! তবে ফর্ম, শক্তি, কন্ডিশন বিবেচনা করলে কোনো সন্দেহ নেই আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড শুধু ফেভারিট নয়, একেবারে হট ফেভারিট! ইয়ুন মরগানের বর্তমান দলটা ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন বিশ্বের যে কোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শক্তি রাখে। ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হওয়ার পর নিজেদের নতুন করে গড়ে তোলার মিশনে নামে ইংলিশরা। পুরো দলের ব্যাটিং শক্তি যেভাবে জোরদার করে তারা-সেটা এখন যে কোনো দলের বোলিং আক্রমণের জন্য আতঙ্কের বিষয়। জমাট ওপেনিং। দৃঢ় মিডল অর্ডার। এবং লেজের সারিতে শক্তিমান রিজার্ভ ব্যাটিং-এই মুহূর্তে বিশ্বের ওয়ানডে ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপটা সবচেয়ে বেশি কমপ্যাক্ট। বলা হয়ে থাকে এই দলের ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান পর্যন্ত ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। -ঠিকই তো! দলের দশ নম্বর ব্যাটসম্যানেরও কাউন্টি ক্রিকেটে সেঞ্চুরি আছে! এক থেকে দশ নম্বর পর্যন্ত দলের এই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংই ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দলের চেহারা বদলে দিয়েছে। মিডল অর্ডারে বেন স্টোকস ও মইন আলীর মতো চৌকস অলরাউন্ডার আছেন। আর নিজেদের পরিচিতি কন্ডিশনে বোলিংয়ের যথাযথ ব্যবহারটা ইংলিশ অধিনায়ক মরগানের চেয়ে আর কেউ ভালো জানেন না। গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে যে কায়দায় হারিয়েছে ইংল্যান্ড-সেটাই তাদের আত্মবিশ্বাসকে তুঙ্গে পৌঁছে দিয়েছে। স্বাগতিকদের এই দলের দুর্বল দিক আপাতত একটাই-ওপেনার জেসন রয়। ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান গ্রুপের তিন ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছেন। আজ সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এমন ফর্ম হারা ওপেনারকে একাদশে রাখার ঝুঁকি কি নেবেন ইংলিশ অধিনায়ক মরগান? কার্ডিফে আজ ইংল্যান্ডের মারকুটো ব্যাটিংয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের তেজি পেস বোলিংয়ের লড়াইয়ের অপেক্ষায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম সেমিফাইনাল। ইংলিশ কন্ডিশনের সুবিধাটা পাকিস্তানি পেস বোলাররা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগাতে পারে-তার প্রমাণ তারা রেখেছে গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচ জিতে। তবে পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ভালোই জানেন দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলঙ্কার চেয়েও কঠিন প্রতিপক্ষ হচ্ছে ইংল্যান্ড-‘কোনো সন্দেহ নেই ওরা অনেক ভালো দল। পেছনের লম্বা সময় ধরে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে। তাদের বিপক্ষে ভালো পারফরম্যান্স করতে হলে আমাদের অবশ্যই পজিটিভ মনোভাব নিয়ে মাঠে নামতে হবে।’