খুলনা টাইটান্সকে ৫৪ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করলো সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটস। ১৪১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ২২ বল বাকি থাকতেই ৮৬ রানে গুটিয়ে যায় মাহমুদউল্লাহদের ইনিংস।
হেরে গেলেও বিপিএলের শিরোপা লড়াইয়ে খুলনার আশা শেষ হয়ে যায়নি। বুধবারের (৭ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রাজশাহী কিংস বাধা পেরোতে পারলে এবারের আসরে চতুর্থবারের মতো ঢাকা-খুলনা ম্যাচ উপভোগ করবেন দর্শকরা।
দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে মধুর প্রতিশোধটাও সেরে নিলেন সাকিবরা! টুর্নামেন্টে প্রথম দু’বারের (রাউন্ড রবিন পর্ব) দেখাতেই হারের স্বাদ পায় তারা। সবশেষ গত ৪ ডিসেম্বরের বাঁচা-মরার ম্যাচে ছয় উইকেটের জয়ে পয়েন্ট টেবিলে পাঁচ থেকে দুইয়ে উঠে আসে মাহমুদউল্লাহর দল।
ঢাকার বোলিং তোপে মাত্র দু’জন দুই অঙ্কের রানের দেখা পান। সর্বোচ্চ ২৮ রান আসে আন্দ্রে ফ্লেচারের ব্যাট থেকে। আরিফুল হক করেন ১৪। মাত্র ৫ রান করে সমর্থকদের আশাহত করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
জয়ের লক্ষ্যে ওপেনিং জুটিতে ৩৪ রান তুলে দলকে ভালো শুরু এনে দেন দুই ওপেনার ফ্লেচার ও মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে (ষষ্ঠ) ব্রেকথ্রু এনে দেন সাকিব আল হাসান। ওয়াইড বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন ফ্লেচার (২৮)।
পরের ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন আন্দ্রে রাসেল। মাহমুদউল্লাহর (৫) পর হাসানুজ্জামানকে (৫) সাজঘরে পাঠান ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার। বেনি হাওয়েলকে (৪) এলবিডব্লু করে উইকেটের খাতায় নাম লেখান বাঁহাতি স্পিনার সাঞ্জামুল ইসলাম।
দশম ওভারে নিজের বলে নিজেই আব্দুল মজিদের (৭) ক্যাচ তালুবন্দি করেন মোসাদ্দেক হোসেন। দলীয় ৫৩ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ের মুখেই পড়ে খুলনা। ১৫ রান যোগ হতেই নিকোলাস পুরানকে (৯) ডোয়াইন ব্রাভোর ক্যাচবন্দি করেন আবু জায়েদ।
১৫তম ওভারে খুলনা শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন ব্রাভো। শুভাগত হোমের (৮) স্ট্যাম্প ভাঙার পর মোশাররফ হোসেনকে (১) সাঞ্জামুল ইসলামের তালুবন্দি করেন। পরের দুই ওভারে যথাক্রমে অারিফুল হককে (১৪) রাসেল ও জুনাইদ খানকে (১) এভিন লুইসের ক্যাচ বানিয়ে খুলনা ইনিংসের ইতি টানেন ব্রাভো।
ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও উজ্জ্বল ছিলেন ব্রাভো ও রাসেল। দু’জনই তিনটি করে উইকেট তুলে নেন। বাকি চারটি নেন জায়েদ, সাকিব, সাঞ্জামুল ও মোসাদ্দেক।
এর আগে দলীয় ৬৫ রানে পাঁচ উইকেট হারালেও ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে মাঝারি পুঁজি এনে দেন আন্দ্রে রাসেল। নির্ধারিত ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে আট উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান তোলে ঢাকা।
বিপর্যয়ের মুখে ৪৯ রানের জুটি গড়েন দুই ক্যারিবিয়ান রাসেল ও ব্রাভো। ১৯তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ২৫ বলে ৪৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন রাসেল। তাতে ছিল ৪টি চার ও ৩টি ছক্কার মার। ২২ বলে ২৩ রান করে অপরাজিত থাকেন ব্রাভো।
প্রথম কোয়ালিফায়ারে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন খুলনা দলপতি মাহমুদউল্লাহ। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ব্রেকথ্রু এনে দেন জুনাইদ খান। নিকোলাস পুরানের গ্লাভসে আটকা পড়েন মেহেদী মারুফ (৭)।
চতুর্থ ওভারে এসে জোড়া আঘাত হানেন জুনাইদ। কুমার সাঙ্গাকারার (৯) পর এভিন লুইসকে (১১) সাজঘরে পাঠান পাকিস্তানি পেসার। দলীয় ২৮ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপের মুখেই পড়ে ঢাকা।
আরো ২৮ রান যোগ হতেই সাজঘরে ফেরেন নাসির হোসেন (১৩)। নবম ওভারে তাকে শুভাগত হোমের তালুবন্দি করেন পার্টটাইম বোলার ফ্লেচার। অধিনায়ক সাকিবও (১৮) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে ঢাকা দলপতিকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন ফ্লেচার। সাকিবের বিদায়ে ৬৫ রানে পাঁচ উইকেটের পতন ঘটে। দলীয় ৮৯ রানের মাথায় রান আউটের আউটের ফাঁদে পড়েন মোসাদ্দেক (৮)। ইনিংসের শেষ ওভারে মাত্র দুই রানের বিনিময়ে আলাউদ্দিন বাবুকে (০) ক্লিন বোল্ড করেন জুনাইদ।
একাই চার উইকেট নিয়ে দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শন করেন জুনাইদ খান। ফ্লেচার দু’টি ও রাসেলকে ফেরান বেনি হাওয়েল।
এদিকে, মঙ্গলবারের (৬ ডিসেম্বর) এলিমিনেটর ম্যাচ হেরে আসর থেকে বিদায় নিয়েছে তামিম-গেইলের চিটাগং ভাইকিংস। ১৪৩ রানের লক্ষ্যে ৯৪ রানে সাত উইকেট হারালেও চিটাগংয়ের জয়ের স্বপ্নে জল ঢেলে দেন ড্যারেন স্যামি। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৫৫ রানে (২৭ বল) অপরাজিত থেকে রাজশাহীকে কোয়ালিফায়ারে নিয়ে যান ক্যারিবীয় তারকা।