চট্টগ্রামে ঢাকার কাছে হারার পর টানা ৫ জয় পেয়েছিল চিটাগং। ১১ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে রয়েছে দলটি। সমান ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট পাওয়া ঢাকাকে পেছনে ফেলার সুযোগ নেই কারোরই।
ঢাকা ডায়নামাইটস বোলারদের দারুণ শুরুর পর তামিম-শোয়েব মালিকের দৃঢ়তাভরা ব্যাটিংয়ে ৬ উইকেটে ১৩৪ রান করে চিটাগং। কুমার সাঙ্গাকারা, আলাউদ্দিন বাবু, আন্দ্রে রাসেলের ব্যাটে ৮ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছায় ঢাকা।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি ঢাকার। একটি ছক্কায় ৯ রান করে ফিরে যান মেহেদী মারুফ। মালিককে ছক্কা-চার হাকিয়ে বিদায় নেন তিন নম্বরে নামা নাসির হোসেন। দুই অঙ্কে যেতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন।
আগের ম্যাচে ঝড় তোলা এভিন লুইসের বদলে ফেরা সাঙ্গাকারা ধরে রাখেন এক প্রান্ত। দলে ফিরে পাঁচ নম্বরে নামা আলাউদ্দিনের সঙ্গে রানিং বিটুইন দ্য উইকেট মোটেও ভালো হচ্ছিল না তার। একবার আশা ছেড়ে দিয়েও বেঁচে যান থ্রো স্টাম্পে না লাগায়। শেষ পর্যন্ত জাকির হাসানের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়েই ফিরেন লঙ্কান গ্রেট। ৩৫ বলে ৩৫ রান করা সাঙ্গাকারার ইনিংসে চার ৫টি।
বাকিটুকু সহজেই সারেন রাসেল-আলাউদ্দিন। ৫.৩ ওভারে এই দুই জনে গড়েন ৫২ রানের জুটি। ২৭ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন আলাউদ্দিন। ১৮ বলে তিনটি ছক্কা ও একটি চারে অপরাজিত ৩১ রান করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার রাসেল।
এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবারের দ্বিতীয় ম্যাচে শুরুটা ভালো হয়নি চিটাগংয়ের। অষ্টম ওভারে ৩৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দলটি।
ঝড় তোলার আগেই ক্রিস গেইলকে ফিরিয়ে দেন আন্দ্রে রাসেল। শূন্য রানে জীবন পাওয়া এনামুল হক ফিরেন রানের খাতা খোলার আগেই। চার হাঁকিয়ে শুরু করা জহুরুল ইসলাম ফিরে যান ৬ রান করেই।
তামিম-মালিকের ইনিংস মেরামতের প্রচেষ্টা ব্যর্থ শুরুতেই ব্যর্থ হতে বসেছিল। একাদশ ওভারে সাকিবের বলে ১৩ রানে ভাঙতে পারতো তাদের জুটি।
লংঅফে মালিকের ক্যাচ তৃতীয় প্রচেষ্টাতেও তালুবন্দি করতে পারেননি দলে ফেরা আলাউদ্দিন বাবু। সে সময় পাকিস্তানের অলরাউন্ডার ব্যাট করছিলেন ৭ রানে। পরের বলে আবার সুযোগ আসে। এবার মিডউইকেটে ৩০ রানে ব্যাট করা তামিমের ক্যাচ ছাড়েন সানজামুল ইসলাম।
জীবন পাওয়া দুই ব্যাটসম্যান শুরুতে খেলেন দেখেশুনে। অপেক্ষা করেন বাজে বলের জন্য। রানে গতি বাড়ানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন তামিম, অভিজ্ঞ মালিক খেলেন প্রান্ত বদল করে।
প্রথম ৪২ বলে ৩৯ রান আসে তামিমের ব্যাট থেকে। রাসেলকে ছক্কা-চার হাঁকানোর পর সিঙ্গেল নিয়ে ৪৫ বলে অধিনায়ক অর্ধশতকে। ডোয়াইন ব্রাভোর পরের ওভারে হাঁকান বিশাল দুটি ছক্কা।
মালিককে ফিরিয়ে ৯.২ ওভার স্থায়ী ৮৬ রানের জুটি ভাঙেন প্রথমবারের মতো খেলতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার রনসফোর্ড বিটন। মালিক ২৫ বলে একটি ছক্কা-চারে করেন ৩৩ রান।
একই স্কোরে ফিরেন তামিমও। রাসেলের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানায় রাসেলের ক্যাচে পরিণত হন অধিনায়ক। ৫৯ বলে ৭৪ রান করা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের অধিনায়কোচিত ইনিংসটি গড়া ৬টি চার ও তিনটি ছক্কায়।
৪২৫ রান নিয়ে বিপিএলের চলতি আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম। তার পেছনে থাকা বরিশাল বুলসের মুশফিকুর রহিমের রান ৩৪০।
দুই বলের মধ্যে দুই থিতু ব্যাটসম্যানের পর শেষের ঝড়ের জন্য মোহাম্মদ নবির দিকে তাকিয়ে ছিল চিটাগং। আফগান অলরাউন্ডার এবার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। দুই বল খেলে ফিরেন শূন্য রানে। ৬ বলের মধ্যে তিন ব্যাটিং ভরসাকে হারানো চিটাগং শেষ ৩ ওভারে ১৫ রানের বেশি করতে পারেনি।
এই ম্যাচে পাঁচ বোলার ব্যবহার করেন সাকিব। স্পিনার হিসেবে বল করেন তিনি একাই। ২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ঢাকার সেরা বোলার ব্রাভো। বিটন ২ উইকেট নেন ৩০ রানের খরচায়। সবচেয়ে হিসেবী বোলিং করেন রাসেল। ২৩ রানে ১ উইকেট নেন এই অলরাউন্ডার।
ধরা ছোঁয়ার মধ্যে লক্ষ্য পাওয়া ঢাকা শেষ পর্যন্ত পেয়েছে অনায়াস জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৩৪/৬ (তামিম ৭৪, গেইল ১, এনামুল ০, জহুরুল ৬, মালিক ৩৩, নবি ০, জাকির ৯*, ইমরান ৪*; জায়েদ ০/২৯, রাসেল ১/২৩, বিটন ২/৩০, সাকিব ০/২৪, ব্রাভো ৩/২৭)
ঢাকা ডায়নামাইটস: ১৮.২ ওভারে ১৩৫/৪ (মারুফ ৯, সাঙ্গাকারা ৩৫, নাসির ১৩, মোসাদ্দেক ৯, আলাউদ্দিন ৩৩*, রাসেল ৩১*; নবি ১/২, শুভাশীষ ০/৩৬, মালিক ১/২৩, ইমরান ১/২৭, তাসকিন ০/২৩, সাকলাইন ০/২০)
ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ডোয়াইন ব্রাভো।