২০০৬ সালের নভেম্বরে নিজের অভিষেক টি-টোয়েন্টির নায়ক ছিলেন তিনি। সেটা ছিল বাংলাদেশেরও প্রথম টি-টোয়েন্টি। আজ নিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচের নায়ক হতে পারেননি ঠিকই। তবে এই ম্যাচের পুরো আলোটা মাশরাফি বিন মুর্তজার ওপরই ছিল। বিদায়ী টি-টোয়েন্টিতে ‘মাশরাফি ভাই’কে জয় উপহার দিতে চেয়েছিলেন সতীর্থরা। তাঁরা কথা রেখেছেন। আজ কলম্বোর প্রেমাদাসায় শ্রীলঙ্কাকে ৪৫ রানে হারিয়ে সিরিজে সমতা এনেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ১৭৬ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা অলআউট ১৩১ রানে।
ব্যাটে-বলে সামনে থেকে ‘নেতৃত্ব’ দিলেন টি-টোয়েন্টির সম্ভাব্য নতুন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করার পাশাপাশি ২৪ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমান অবশ্য ৩ ওভার বোলিং করে ২১ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। তবে বোলার সাকিবের ভূমিকাই বেশি। শুরুর আঘাতটা যে হেনেছেন তিনি।
১৭৭ রানের লক্ষ্য খেলতে নামা শ্রীলঙ্কা পাওয়ার প্লেতে রান তুলবে কী, সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ঘূর্ণিতে ৪০ রানে তাদের ৩ উইকেট নেই। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম দুই বলেই গুনারত্নে ও সিরিবর্ধানাকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক সুযোগ তৈরি হয় মোস্তাফিজের সামনে। বাঁ হাতি পেসারের হ্যাটট্রিক না হলেও ৪০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা তখন থরথর কাঁপছে! শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচে ফেরায় ষষ্ঠ উইকেটে থিসারা পেরেরা-চামারা কাপুগেদেরার ৪৫ বলে ৫৮ রানের জুটি। সাকিবের বলে স্টাম্পড হয়ে পেরেরা ফেরেন ২৭ রান করে।
পেরেরা ফিরলেও বাংলাদেশের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কাপুগেদেরা। লংঅনে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে শ্রীলঙ্কান এই ব্যাটসম্যানকে (৫০) মোস্তাফিজ ফেরালেই বাংলাদেশের জয়টা চলে আসে হাত ছোঁয়া দূরুত্বে। ১৭তম ওভারে মোস্তাফিজ বোলিংয়ে ফিরে আবারও জোড়া শিকার করেন। কাপুগেদারার পর ফেরান লাসিথ মালিঙ্গাকে। ম্যাচ সেখানেই শেষ। সাইফউদ্দিন লং অফে সঞ্জয়াকে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে মুড়ে দেন লঙ্কান ইনিংস।
জিততে হলে নিজেদের মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার নতুন রেকর্ড করতে হতো শ্রীলঙ্কাকে। কিন্তু বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং তার চেয়ে দুর্দান্ত ফিল্ডিং লঙ্কানদের আটকে দিল ১২ বল বাকি থাকতেই।
ব্যাটসম্যানদের ভূমিকাটাও তাই এই জয়ে বড় হয়ে থাকছে। যার শুরুটা করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। চোটের কারণে তামিমের বদলে দলে আসা ইমরুল আর সৌম্য শ্রীলঙ্কান বোলারদের ওপর চড়াও হলেন দ্বিতীয় ওভারে থেকে। ৫ ওভার শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে স্কোরবোর্ডে রান ৫৬। সপ্তম ওভারে সৌম্য (৩৪) আসেলা গুনারত্নের ফিরতি ক্যাচ হওয়ায় ভাঙে ৭১ রানের উদ্বোধনী জুটি। টি-টোয়েন্টিতে উদ্বোধনী জুটিতেই এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।
পরের ওভারে ফেরেন ইমরুলও। উপুল থারাঙ্গার থ্রোয়ে রানআউটে কাটা পড়ার আগে বাঁহাতি ওপেনারের রান ৩৬, টি-টোয়েন্টিতে যেটি তাঁর সর্বোচ্চ। দুই ওপেনার ফিরলেও তৃতীয় উইকেটে সাব্বির রহমান-সাকিবের ৩২ বলে ৪৬ রানের জুটির সৌজন্যে ওভারে দশের ওপর রান তুলছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ১৩ থেকে ১৬-এই চার ওভারে রানরেট শ্লথ হতে শুরু করে, এ সময়ে বাংলাদেশ করতে পেরেছে মাত্র ২১ রান। হারিয়েছে সাব্বির (১৯) ও সাকিবকে (৩৮)।
শেষ ৪ ওভারে ৩৭ রানের সৌজন্যে শ্রীলঙ্কার সামনে চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছুড়ে দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে মালিঙ্গার হ্যাটট্রিকটা হয়েছে এ সময়েই। ১৯তম ওভারে শ্রীলঙ্কান ‘ম’-এর পর পর তিন বলে শিকার বাংলাদেশের তিন ‘ম’-মুশফিক, মাশরাফি, মিরাজ!
মালিঙ্গার হ্যাটট্রিক শ্রীলঙ্কাকে সাময়িক আনন্দে ভাসালেও ক্রিকেট বিধাতা চূড়ান্ত হাসিটা বাংলাদেশের জন্যই বরাদ্দ রেখেছিল। আরও স্পষ্ট করে বললে মাশরাফির জন্য। মাশরাফির শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে পরাজয়ের যন্ত্রণা দিলে সেটা যে বড় অন্যায় হতো!
এবার শ্রীলঙ্কা সফরটা নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের জন্য। তবে সবচেয়ে বেশি মনে থাকবে সিরিজগুলোর ফল। টেস্ট সিরিজ ১-১, ওয়ানডে ১-১, এমনকি টি-টোয়েন্টি সিরিজও শেষ হলো ১-১ সমতায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭৬/৯ (সাকিব ৩৮, ইমরুল ৩৬, সৌম্য ৩৪, সাব্বির ১৯, মোসাদ্দেক ১৭, মুশফিক ১৫; মালিঙ্গা ৩/৩৪)।
শ্রীলঙ্কা: ১৮ ওভারে ১৩১/১০ (কাপুগেদেরা ৫০, পেরেরা ২৭, থারাঙ্গা ২৩; সাকিব ৩/২৪, মোস্তাফিজ ৪/২১, মাহমুদউল্লাহ ১/১৫, সাইফউদ্দিন ১/২৪, মাশরাফি ১/৩০)।
ফল: বাংলাদেশ ৪৫ রানে জয়ী।
সিরিজ: ১-১ সমতা।
ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান।